বিএনপির রাজনীতিতে একটা অস্থির সময় চলছে। দলের সিনিয়র নেতারা একে একে অসুস্থ, রাজনীতি থেকে ক্রমশ নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। মাঝের সারির নেতাদের মধ্যে হতাশা, নেতৃত্বের কোন্দল, একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস, নেতৃত্বের জন্য কেউ কাউকে যোগ্য ভাবছেন না, ঠিক এরকম সময় দলের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক হতাশা দানা বেঁধে উঠেছে। আর এরকম একটি হতাশগ্রস্ত ক্রান্তিকালে বিএনপিতে উত্থান ঘটছে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিপুল প্রভাব এবং জনপ্রিয়তার মধ্যে মাহবুব উদ্দিন খোকন নীরবে সভাপতি পদটি জিতেছেন। তার কারণেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে আরও কয়েকটি পদে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।
বিএনপির নেতারা যখন কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নীতিতে অটল ঠিক সেই সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপিকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য শুধু প্রলুব্ধই করেনি, সভাপতি পদে নিজেকে জয়ী করে প্রমাণ করেছেন যে, নির্বাচনে যদি প্রার্থী জনপ্রিয় থাকে তাহলে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জয়ী হওয়া সম্ভব। মাহবুব উদ্দিন খোকন একদিকে যেমন বেগম খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তেমনই তারেক জিয়ারও আস্থাভাজন ব্যক্তি। বিএনপিতে এটি একটি বিরল যোগ্যতা।
উদ্দিন খোকনের উত্থান ঘটেছে খুব নীরবে এবং আস্তে আস্তে। তিনি রাজনীতির অঙ্গনে বেড়ে উঠেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের ছত্রছায়ায়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সহযোগী আইনজীবী হিসেবে তিনি তার ক্যারিয়ারের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব, ভাল ব্যবহার এবং জনসংযোগের কারণে আস্তে আস্তে তিনি পাদপ্রদীপে আসেন। নোয়াখালী অঞ্চলের এই বিএনপি নেতা দলের বাইরেও জনপ্রিয়তা, একজন সদালাপী এবং বন্ধুবৎসল হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আর এই কারণেই নিজেকে তিনি সব বিতর্ক থেকে আড়াল করেছেন।
বিএনপিতে যখন একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি, কে সরকারের দালাল, কে সরকারের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক করছে তা নিয়ে অস্থির আলোচনা ঠিক সেই সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন আস্তে আস্তে রাজনীতির পাদপ্রদীপে এসেছেন। এ বারের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন। কারণ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি যেকোনো বিচারেই জাতীয় রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই জয়ের পিছনে শুধু বিএনপির সমর্থন ছিল এমনটি ভাবা ভুল হবে। একদিকে যেমন তিনি আঞ্চলিকতাকে উস্কে দিয়ে ভোটার টেনেছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগেরও একটি অংশের নীরব সমর্থন ছিল মাহবুব উদ্দিন খোকনের।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সবসময় খোকনের একটা আলাদা জনপ্রিয়তা ছিল এবং তিনি পরোপকারী আইনজীবীদের সঙ্গে সবসময় একটা সুসম্পর্ক রাখার নীতি নিয়ে চলছেন। রাজনীতির বাইরে আইনজীবী হিসেবেও তার একটি আলাদা অবস্থান রয়েছে। আর এ কারণে বিএনপির রাজনীতিতে ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠছেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সংকট যখন সিনিয়র নেতৃত্বের অসুস্থতা এবং একটি নেতৃত্ব শূন্যতা ঠিক সেই সময় মাহবুব উদ্দিন খোকনের নীরব উত্থান ঘটছে। রুহুল কবির রিজভী কিংবা মোয়াজ্জেল হোসেন আলালের মতো নেতারা যখন জাতীয় রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন ঠিক সে সময় মাহবুব উদ্দিন খোকনের এই উত্থান বিএনপিতে একটা নতুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয় যে, মাহবুব উদ্দিন খোকন তার এই অবস্থান ধরে রাখতে পারেন কিনা। বিএনপির নেতা থেকে তিনি জাতীয় নেতা হতে পারেন কিনা। তবে এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে তার ইঙ্গিত তিনি রেখেছেন।