সৌদি আরবে যেতে চান তারেক জিয়া। আর এ জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেক জিয়ার এখন উদ্বাস্তু। তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়নি। ফলে যে কোনও দেশে যেতে গেলে তাকে ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিতে হয় এবং ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে তারেক জিয়া বিদেশে যেতে পারেন।
এর আগেও তিনি একবার হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এবার তারেক জিয়া ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবার উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। তবে এবার নিছকই ওমরাহ করার জন্য তিনি সৌদি আরব যাচ্ছেন, না এর পিছনে অন্য কোনও দুরভিসন্ধি রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রয়েছে।
সৌদি আরবে বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে। এই সম্পত্তি গুলো দেখভাল করছেন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এবং একান্ত আপনজন মোসাদ্দেক আলী ফালু। মোসাদ্দেক আলী ফালু একাধিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। এখন সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের ব্যবসাগুলো তিনি পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে।
সৌদি আরবে মোসাদ্দেক হোসেন ফালুর যে সমস্ত বিত্ত এবং ব্যবসা তার কোনোটাই তার নিজের নয়। এগুলো সবই বেগম খালেদা জিয়ার। মোসাদ্দেক আলী ফালুর রাজনীতিতে উত্থান নাটকীয়তার মতো, এটা রূপকথাকেও হার মানায়।
ফালু এক সময় খিলগাঁওয়ের গোরখোদক ছিলেন এবং সেখান থেকে মির্জা আব্বাস তাকে তুলে নিয়ে আসেন। বেগম খালেদা জিয়া দেহরক্ষী হিসাবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার প্রিয়ভাজন হয়ে পড়ার ফলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্রুত তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। একসময় ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হলে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে একান্ত সচিব করা হয়। একান্ত সচিব করার জন্য যে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা তা না থাকা সত্ত্বেও ফালুকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব করা হয়েছিল।
আর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে মোসাদ্দেক আলী ফালু প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে অবশ্য তারেক জিয়ার দাপটে তিনি টিকতে পারেননি। হাওয়া ভবনের কাছে পরাজিত হয়ে শেষপর্যন্ত তিনি এক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে রমনার আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার সম্পর্ক অটুট ছিল। এক এগারোর সময় মোসাদ্দেক আলী ফালু গ্রেপ্তার হলেও বেগম খালেদা জিয়ার সম্বন্ধে কোনো কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করেননি।
তবে এই সময় জানা যায় যে, ফালুর যে সমস্ত সম্পদ রয়েছে তার সবই আসলে বেগম খালেদা জিয়ার। বেগম খালেদা জিয়ার লুন্ঠিত অর্থ ফালুর হেফাজতে ছিল। আর এই কারণেই এই সমস্ত অর্থগুলো দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু বাংলাদেশ ছাড়াও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বানিয়েছেন বলে জানা যায় এবং এ সমস্ত সম্পদগুলোর আসল মালিক হল বেগম খালেদা জিয়া। কারণ, মোসাদ্দেক আলী ফালুর একাধিক ব্যবসার অংশীদার হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর নাম দেখা যায়।
ফালুর এই সম্পত্তিগুলো বেগম খালেদা জিয়ার- এরকম একটি ধারণা থেকেই তারেক জিয়া এবার সৌদি আরবে মিশনে যাচ্ছেন। কারণ, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার যে সম্পত্তিগুলো রয়েছে সেই সম্পত্তিগুলোর সঠিক মুসাবিদা করতে চান তারেক জিয়া। এই সম্পত্তিগুলোতে তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে এমন কথা তিনি বলেছেন।
অন্যদিকে এই সমস্ত সম্পত্তি ফালু কুক্ষিগত করতে পারে বলেও তিনি একাধিক বিএনপি নেতাকে বলেছেন। এখন এই সম্পত্তিগুলো উদ্ধারের জন্য সৌদি আরব যেতে চান তারেক জিয়া। সেখানে ফালুর সঙ্গে তার মুখোমুখি লড়াই হবে এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে তারেক জিয়া হজকে বাতাবরণ করেই সৌদি আরব যাওয়ার জন্য এখন জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্পত্তি উদ্ধার বা সম্পত্তির লোভ এ সময় তারেক জিয়াকে সবচেয়ে বেশি তাড়িত করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।