ঋণদাতাদের প্রলুব্ধ করতে নিজের সম্পদ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেখিয়ে প্রতারণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার জরিমানা করেছেন নিউ ইয়র্কের একজন বিচারক। এই অর্থের সুদসহ মোট কমপক্ষে ৪৫ কোটি ডলার জরিমানা পরিশোধ করতে হবে মামলার সব আসামীকে। এর মধ্য দিয়ে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য নিয়ে আরও একটি বড় রকম ধাক্কা খাচ্ছেন ট্রাম্প। আদালত বলেছে, এই জরিমানা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্পকে আগামী তিন বছরের জন্য নিউ ইয়র্কে কোনো করপোরেশনের কোনো অফিসিয়াল দায়িত্ব বা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করেছেন বিচারক। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্পের আইনজীবী অ্যালিনা হাব্বা। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে বিচারক আর্থার ইঙ্গোরন এই রায় দেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে সেপ্টেম্বরে দেয়া রায় বাতিল করেছেন বিচারক ইঙ্গোরন। ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্যের ভিত্তি নিয়ন্ত্রণ করে যেসব কোম্পানি তা বিলুপ্ত করতে সেপ্টেম্বরে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
কিন্তু তা বাতিল করে শুক্রবার তিনি বলেছেন, ওই রায়ের আর প্রয়োজন নেই। কারণ, তিনি ট্রাম্পের বাণিজ্য তদারকির জন্য একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ও পরিচালক নিয়োগ দিচ্ছেন। বিচারক ইঙ্গোরন লিখেছেন, ট্রাম্প এবং মামলার অন্য বিবাদীরা তাদের ত্রুটি স্বীকার করতে অক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। তারা তাদের ত্রুটি স্বীকার করেননি। তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও তারা তা স্বীকার করতে চাননি।
ট্রাম্প এবং তার পরিবারের ব্যবসায় এক বছরে নিট সম্পদের পরিমাণ এক দশক ধরে বাড়িয়ে দেখিয়ে এসেছেন ৩৬০ কোটি ডলার। এর মাধ্যমে ঋণদাতাদের প্রলুব্ধ করে ব্যাংকারদের বোকা বানিয়েছেন। এমন অভিযোগ এনে ট্রাম্প ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেতিতিয়া জেমস। এর বাইরে ডনাল্ড ট্রাম্প চারটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। তিনি এসব অভিযোগকে লেতিতিয়া জেমসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বলে অভিহিত করেছেন। উল্লেখ্য, লেতিতিয়া জেমস একজন ডেমোক্রেট। নিজের সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফরমে লেতিতিয়া জেমসকে তিনি ‘ক্রকড’ এবং দুর্নীতিপরায়ণ বলে অভিহিত করেছেন। আরও বলেছেন, এই মামলা হলো নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ এবং ‘ডাইনিবিদ্যা’। তিনি লিখেছেন, এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণ প্রতারণার, লজ্জার। আমরা অন্যায় বিচারের পক্ষে থাকতে পারি না।
নিউ ইয়র্কের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের জন্য তিন বছরের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প ও তার কোম্পানিগুলোকে নিষিদ্ধ করেছেন বিচারক ইঙ্গোরন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ব্যাংকগুলো থেকে তারা ঋণ পাওয়ার সক্ষমতা হারাবে। এই মামলায় ট্রাম্পের প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র এবং এরিককেও আসামী করা হয়েছে। তাদেরকে প্রত্যেককে আলাদাভাবে ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা করেছেন বিচারক। তাদের আইনজীবী ক্লিফোর্ড রবার্ট এই সিদ্ধান্তকে ভয়াবহ অবিচার বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আশা করেন, এই রায় আপিলে বাতিল হবে।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সাবেক সিএফও অ্যালেন ওয়েইসেলবার্গকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার আলাদা একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য তাকে জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ ডলার। নিউ ইয়র্কের কোনো রকম আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তাকে যাবজ্জীবনের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন আদালত। রায়ে লেতিতিয়া জেমস বলেছেন, নিজের মিথ্যা তথ্য, প্রতারণা এবং ভয়াবহ জালিয়াতির জন্য জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্পকে। তিনি নিজেকে যত বড়, যত ধনী বা শক্তিধর বলে মনে করুন না কেন, তিনি বা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।
এ বছরে ৫ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের চ্যালেঞ্জে সামনে আসতে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু বিচারকের রায়ের ফলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার এই মুঘলের ভবিষ্যতের ওপর প্রচণ্ড এক আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করেছেন বিচারক ইঙ্গোরন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এর আগেও কয়েকটি মামলায় জরিমানা করা হয়েছে। ফ্লোরিডা ও কলোরাডো রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় আদালত। ফলে তিনি যে আইনি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাতে সামনের নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।