আইন-আদালত

রিজভীর দাবী অনুযায়ী, সমঝোতা করেই কী মুক্তি পেলেন ফখরুল?

গতকাল বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ দুজনের মুক্তিতে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের উৎসব এবং উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতা কারাগারে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং কারামুক্ত নেতাদেরকে স্বাগত জানান। তারা সেই সময়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগানও দেন। কিন্তু বিএনপির বড় অংশ যখন ফখরুল-খসরুর কারামুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে, তখন বিএনপির কোন কোন নেতা এই মুক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। এই সন্দেহের প্রধান কারণ হল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি মন্তব্য।

কিছুদিন আগেই তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, আপস সমঝোতায় রাজি না হওয়ার কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এটিও বলেছিলেন যে, নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রস্তাবে রাজি হননি- এই কারণেই তাদেরকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন হল যে, যদি রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য সত্যি হয় তাহলে এখন কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমঝোতা করে জামিন পেয়েছেন? বিএনপির মহাসচিবের সাথে সরকারের গোপন সমঝোতা এবং সখ্যতার খবর নতুন নয়। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে বিএনপিতে নানা রকম কথাবার্তা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব সমালোচিত হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৮’র নির্বাচনের আগে আগে সরকারের সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগের খবর বিএনপির বিভিন্ন আলোচনায় বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছিল। এ সময় বিএনপির অনেক নেতাই তাকে সরকারের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করতেন।

২০১৮’র নির্বাচনের পর বিএনপির যে সংসদ সদস্যরা শপথ নেন সেটাকেও কেউ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সরকারের আদেশ প্রতিপালনের একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে মনে করেন অনেক বিএনপির নেতা। বিশেষ করে নিজে সংসদে না গিয়ে অন্যদের সংসদে পাঠানোর মতো ঘৃণ পরিকল্পনা বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় সমালোচনার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় এখনও। ওই নির্বাচনে বিএনপি কেন গিয়েছিল, নির্বাচনের পরে যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে, তারা নির্বাচন মানে না এবং সংসদে যাবেন না সে ক্ষেত্রে তারা কেন আবার সংসদে তাদের হাতে গোনা কয়েক জন সংসদ সদস্যকে পাঠিয়ে সরকারকে বৈধতা দিলেন ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন বিএনপির এই মহাসচিব।

তবে লন্ডনের আশীর্বাদে তিনি মহাসচিব পদে শেষ পর্যন্ত টিকে গিয়েছিলেন। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারামুক্তির পর অনেকেই মনে করেন যে, তার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে গত এক বছরে তিনি নেতৃত্বশূন্য বিএনপিকে একটা অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের গোপন সখ্যতা বা সরকারের বিভিন্ন পরামর্শে তিনি দলকে যে বিভিন্ন ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন এ নিয়ে বিতর্ক বিএনপিতে রয়েই গেছে। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিনে মুক্তি পেলেন। তিনি সরকারের সাথে আপস করেই মুক্তি পেয়েছেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে হয়তো কেউই দিতে পারবে না। তবে সামনের দিনগুলোতে বিএনপির মহসচিব কিভাবে দায়িত্ব পালন করেন তার ওপর নির্ভর করছে এই প্রশ্নের উত্তর। যদি দেখা যায় যে, তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঢিলেঢালা ভাব রাখছেন, সংগঠনকে নিয়ে সে আগের মতো সময় দিচ্ছেন না বা হুটহাট করেই বিদেশি চলে যাচ্ছেন রহস্যজনকভাবে তাহলে বুঝতে হবে সরকারের সাথে সমঝোতা করেই মির্জা ফখরুল জামিন পেয়েছেন।

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button