ভ্রমণ

সেন্ট মার্টিনের রাতে সাগরপাড়ে কেন আলো দেখা যায়?

সমুদ্রের ঢেউ বালুবেলায় আছড়ে পড়ার সময় উজ্জ্বল নীল নিয়নবাতির মতো জ্বলে উঠছে—পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্রতটে বিরল এই দৃশ্য কখনো কখনো দেখা যায়। এই অপূর্ব প্রাকৃতিক ঘটনাটি কয়েক দিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও দেখা যাচ্ছে। বিশেষত যে সময় পূর্ণিমা থাকে আর দ্বীপের দক্ষিণাংশে আলোকদূষণ কম থাকে, তখন অপূর্ব দৃশ্যটি দেখা যায় বেশি। দিনের আলো ফুরানোর পরপরই দৃশ্যটি ফুটে ওঠে, যা বহু পর্যটককে আকৃষ্ট করে।

কেন এমন হয়?
জোনাকির দেহে যেমন আলো জ্বলে, ঠিক তেমনই বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর দেহে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে আলো জ্বলে ওঠে। জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে আলো নির্গত হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে বলে বায়োলুমিনিসেন্স। গভীর সমুদ্রের তলে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, কিন্তু সেখানেও আলোর প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী শিকার ধরা, আত্মরক্ষা কিংবা খাদ্য গ্রহণের জন্য আলোর ব্যবহার করে। বিভিন্ন জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণীর দেহ থেকে আসে এই আলো।

এই আলো আসলে কী?

এসব প্রাণীর দেহে লুসিফেরিন নামক একধরনের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয় লুসিফারেজ এনজাইমের প্রভাবে। এই বিক্রিয়ায় তৈরি হয় অক্সিলুসিফেরিন। এই বিক্রিয়ার ফলে যে শক্তি নির্গত হয়, তা আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই আলো সাধারণত নীল, নীলচে-সবুজ, লাল বা বাদামি রঙের হয়।
বাংলাদেশের সমুদ্রতটে এই আলোর উৎস একধরনের ক্ষুদ্র শৈবাল। পূর্ণিমার সময়ে উত্তাল সমুদ্রের জোয়ারের সঙ্গে সঙ্গে এসব শৈবাল প্রচুর পরিমাণে ভেসে আসে। সাধারণত স্থির পানিতে এরা জ্বলে না। যখন সমুদ্রের পানি কোনো কারণে আন্দোলিত হয় অথবা সমুদ্রতটে ঢেউ আছড়ে পড়ে, তখনই এরা জ্বলে ওঠে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে বালুতে ভেসে আসার কিছুক্ষণ পর পর্যন্তও প্রজ্বলিত থাকে। নাড়াচাড়া করলে আরেকটু জ্বলে ওঠে। তারপর নিভে যায়।

সেন্ট মার্টিন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সাগরে বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে এই দুর্লভ ঘটনাটি ঘটে। যেমন থাইল্যান্ডের ক্রাবি, ভিয়েতনামের হা লং বে, ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রাধানগর, মালদ্বীপের ভাদু বিচ, ক্যালিফোর্নিয়ার টরে পাইন্স বিচ ইত্যাদি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button