বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেন: টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে ক্যান্সারের ঝুঁকি!
দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যার কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (এসডো)-এর গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এসডোর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় দেশের জনপ্রিয় টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহারের মাত্রা অনুসন্ধান করা হয়। এ জন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানীয় দোকান থেকে টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করার পর ল্যাব পরীক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ এ পাঠানো হয়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের সব নমুনাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। টুথপেস্টের নমুনাগুলোতে ফ্লোরাইড এবং সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ২২টি নমুনার মধ্যে ৫টি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গবেষণায় সাতটি অন্যান্য দেশের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, প্যারাবেনের কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দাঁতের এনামেল গঠনে সমস্যা তৈরি করে। তাছাড়া অতিরিক্ত সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।
এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যতে প্যারাবেনের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে প্যারাবেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, আমাদের দৈনন্দিন পণ্যে এতো উচ্চমাত্রায় এই বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার দেখে আমি অনেক উদ্বিগ্ন। এগুলো নীরবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, এসব রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং প্রজনন সংক্রান্ত জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লেখ্য, প্যারাবেন হলো এক ধরনের রাসায়নিক যা সাধারণত প্রসাধনী, পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট (শ্যাম্পু, ডিওডোরেন্ট, হ্যান্ডওয়াশ) এবং ওষুধপত্রের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি আমাদের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরত্বপূর্ণ এন্ড্রোকাইন সিস্টেমের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এ কারণে বেশ কয়েকটি দেশ তাদের এ ধরনের পণ্যগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।