অপরাধপ্রতারণা

খাসজমি ও খাল দখল করে নিলো আওয়ামী লীগ নেতা

বরিশাল সদর উপজেলার মহাবাজ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের আধাপাকা বাড়ি। জমিসহ বাড়ির দাম প্রায় কোটি টাকা। চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বাজারে তাঁর রয়েছে বালু, মাছ ও স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা। এর পরও ভূমিহীন সেজে গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়কের পাশে ৫০ শতক খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এখন সেই জমির পাশের খাল ভরাট করছেন তিনি।

দেলোয়ার হোসেন চরবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার জোরে খাসজমি বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখন খাল দখলের পাঁয়তারা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, নগরী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তালতলী বাজার। এর উত্তর পাশ ঘেঁষে আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী। নদীর ওপর নির্মিত তালতলী সেতু পার হয়ে উত্তরমুখী সড়ক দিয়ে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন হয়ে মুলাদী উপজেলা ও কাজীরহাট থানা এলাকায় যাতায়াত করা যায়। সেতুর পরই সড়কের দু’পাশে বড় অংশের জমি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। প্রভাবশালীরা বিভিন্ন মাধ্যমে খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, শায়েস্তাবাদমুখী সড়কে সেতু সংলগ্ন দুই পাশে দুটি অভিজাত রেস্তোরাঁ। পশ্চিম পাশে ‘মাটির সাজ’ রেস্তোরাঁ লাগোয়া জমি ইজারা নিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। সড়ক ও জমির মাঝে ৭০ ফুট প্রশস্ত খাল। তালতলীর আড়িয়াল খাঁ শাখা নদী থেকে উৎস খালটি শায়েস্তাবাদের দিকে প্রবাহিত হয়ে মূল আড়িয়াল খাঁর সঙ্গে মিশেছে। সড়কের পাশে খালের ভেতরে ৫০ ফুট এবং লম্বায় ২০০ ফুট বালু ফেলে ভরাট করেছেন দেলোয়ার। এতে সেখানে খাল সরু হয়ে গেছে। খালের ভরাট অংশে একটি দোকানঘর তুলেছেন এবং বাকি অংশে সবজি চাষ করেছেন দেলোয়ার।

চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দীপক কুমার চ্যাটার্জি বলেন, সড়ক সংলগ্ন খালের অপর প্রান্তের খাসজমি দেলোয়ারের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া। তিনি জমি ভরাটের সঙ্গে খালের অর্ধেকের বেশি ভরাট করে ফেলেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, দেলোয়ার সচ্ছল ব্যবসায়ী হয়ে কীভাবে দরিদ্র ভূমিহীন হিসেবে খাসজমি বন্দোবস্ত পেয়েছেন? সেই জমি উন্নয়ন করতে খালই ভরাট করে ফেলছেন! ৭ নম্বর ওয়ার্ড ও শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক চাষাবাদে এই খালের পানি ব্যবহার করেন। খালটি ভরাট হলে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন।

চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ বলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষকরা তাঁর কাছে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে খাল ভরাটের অভিযোগ করেছেন। এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানানো হবে।

সচ্ছল হয়েও কীভাবে খাসজমি বরাদ্দ পেলেন–জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার চেয়েও সচ্ছল আরও অনেকে জমি পেয়েছে। তাই আমিও নিয়েছি।’ তাঁর দাবি, ৫০ শতক নয়, ১০ শতক জমি নিয়েছেন। তিনি অস্থায়ীভাবে খাল ভরাট করেছেন জানিয়ে দেলোয়ার বলেন, সবজি চাষের জন্য মাটি কেটে ওপরে বালু দিয়েছেন। তোলা দোকানঘরটি প্রয়োজনে সরিয়ে ফেলবেন।

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মতিন খান বলেন, শায়েস্তাবাদ সড়ক সংলগ্ন খাল দখল হলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button