চীনা নববর্ষে মিয়ানমারের জান্তাকে উৎখাত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে মিয়ানমারের সশ্রস্ত্র বিদ্রোহীদের জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স। এ বছর সামরিক শাসনের মূলোৎপাটন করা হবে ঘোষণা দিয়ে এক বার্তা জারি করেছে জাতিগত জোটটি। তারা বলছে, ড্রাগনে প্রবেশ করুন, জান্তা থেকে প্রস্থান করুন। খবর ইরাবতীর
তিন সংগঠন হলো- মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও আরাকান আর্মি (এএ)। জোটটি গত বছরের ২৭ অক্টোবর ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করার পর থেকে কয়েক ডজন শহর দখল করেছে। রাখাইন, চিন এবং উত্তর শান রাজ্যে ৪০০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি এবং ফাঁড়ি দখল করেছে তারা। এছাড়াও চীনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথও দখল করেছে জোটটি।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস তাদের এক রিপোর্টে বলছে, ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং আরও দু’টি সশস্ত্র গোষ্ঠী মিলে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে।
চীনা নববর্ষের আগে প্রকাশিত এক বার্তায় জানানো হয়, এবারের বছরটি ড্রাগনের। চীনা জনগণ ড্রাগনের বছরকে সবচেয়ে শুভ রাশিচক্র হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা আশা করি, ড্রাগন ইয়ারের তাৎপর্য ও আশীর্বাদ মিয়ানমারের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যাবে।
বার্তায় আরও জানানো হয়, আমরা বিশ্বাস করি, সামরিক স্বৈরাচার নির্মূলে মিয়ানমারের জনগণের মুক্তির ইচ্ছা এই ড্রাগন বছরেই সম্পন্ন হবে।
জাতিগত জোটটি উত্তর শান রাজ্যে সামরিক স্বৈরাচারের অবসান এবং মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাজ করা সাইবার অপরাধীদের মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন ১০২৭’ চালু করেছে। এরপর থেকে এমএনডিএএ উত্তর শানের কোকাং সীমান্ত এলাকা জান্তা সৈন্যদের কাছ থেকে মুক্ত করেছে। পরে টিএনএলএ কোকাং সীমান্তের কাছাকাছি সাতটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, সীমান্তে বসবাসকারীরা যাতে নিরাপদে চীনা নববর্ষ উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য জোটটি তার উত্তর শান আক্রমণ বন্ধ করেছে। গত মাসে চীনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় জোটটি।
উত্তর রাখাইন রাজ্যে জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এএ। বেশ কয়েকটি শহর ও কয়েক ডজন ফাঁড়ি দখল করেছে তারা। এমএনডিএএ জান্তা থেকে কোকাংয়ের মুক্ত করতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এতে তিন জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এমএনডিএএ কমান্ডার পেং ড্যাকসুন (ওরফে পেং ড্যারেন), এএ প্রধান মেজর জেনারেল তোয়ান মারত নাইং ও টিএনএলএ’র চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টার আইক ফোন।
এ সময় আরাকান আর্মির প্রধান টার আইক ফোন বলেন, কোকাংকে মুক্ত করার লড়াইয়ে জোটের ঐক্য প্রমাণিত হয়েছে। জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্য অর্জনে প্রত্যয় ও অটুট বিশ্বাস মনে ধারণের আহ্বান জানান তিনি।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোকাংয়ের বিস্ফোরকগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতু পুনঃর্নির্মাণ করা হচ্ছে। সামরিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জোটটি বলেছে, মিয়ানমারের জনগণের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করছে তারা। সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিদিন নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।