প্রধানমন্ত্রীত্ব ভাগাভাগি: নওয়াজ ৩ বছর, বিলাওয়াল ২ বছর!
পাকিস্তানে এই মুহূর্তে জোট সরকার গঠনের আলোচনায় ক্ষমতা ভাগাভাগির জল্পনা তুঙ্গে। সম্ভাব্য জোট সরকারে নওয়াজ শরিফের প্রধানমন্ত্রিত্বের ক্ষমতায় ভাগ বসাতে চাইছেন বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। আবার ইমরান অনুসারীরাও সরকার গঠনের তোড়জোড় ফেলে হাত গুটিয়ে বসে নেই। একই সঙ্গে নির্বাচনী ফলের কারচুপি নিয়েও সরব তারা। তবে ভোটের ফল ঘোষণার পর এই মুহূর্তে জোট রাজনীতিই যাবতীয় আকর্ষণ কেড়ে নিয়েছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করা দল পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ আরও একবার পূর্ণ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের আসনে বসুক, এমনটা চাইছে না পিপিপি। বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চায় পিপিপি। এ ক্ষেত্রে এমন সমীকরণ হতে পারে, সর্বাধিক আসনে জয়ী দল পিএমএল-এন নেতা তিন বছর এবং পিপিপির নেতা দুই বছর দায়িত্ব পালন করবেন। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, দুই দলের দুই শীর্ষ পুরো মেয়াদে ক্ষমতাসীন না থেকে ভাগাভাগি করে প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলাতে পারেন।
গত রবিবার দুই দল সরকার গঠন নিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। পাঞ্জাবের লাহোরে বিলাওয়ালের বাসায় এই বৈঠক হয়। এখানেই উঠে আসে ক্ষমতা ভাগাভাগির কথা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরিফ। এ সময় পিপিপির পার্লামেন্টারিয়ান প্রধান দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ছেলে বিলাওয়ালের প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি তোলেন। ২০১৩ সালে পিএমএল-এন ও ন্যাশনাল পার্টির মধ্যে এভাবে ক্ষমতা ভাগাভাগি হয়েছিল। তবে সেটি ছিল প্রাদেশিক পর্যায়ে। এবার তা কেন্দ্রের সরকারের কৌশল হিসেবে আলোচনার টেবিলে এলো।
গত রবিবারের বৈঠকের খবর জানিয়ে বলা হয়, পিপিপি ও পিএমএল-এন জোট শুধু কেন্দ্রে নয়, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানেও সরকার গঠন করতে চায়।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে দল হিসেবে সর্বোচ্চ ৭৯টি আসনে জয়লাভ করেছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন), যার প্রধান নওয়াজ শরিফ। এরপরই রয়েছে ৫৪ আসনে জয়লাভ করা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি), যার প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। ২৬৫ আসনের জাতীয় পরিষদে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ১৩৪টির মতো আসন। পিএমএল-এন-পিপিপি জোট করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ১৭ আসন জেতা মুত্তাহিদা ক্বওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএমপি) শরিফ-ভুট্টো পরিবারের ক্ষমতা ভাগাভাগির সরকারে সমর্থন দিতে পারে।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরাসরি ভোট হওয়া আসনগুলোর বাইরেও আরও ৭০টির মতো সংরক্ষিত আসন রয়েছে। সামগ্রিকভাবে সরকার গঠন করতে ৩৩৬টি আসনের মধ্যে ১৬৯টি দরকার পড়ে। তবে সরাসরি নির্বাচন হওয়া আসনগুলোর অঙ্কই জাতীয় পরিষদের গতিপথ ঠিক করে দেয়। সে ক্ষেত্রে সব দলের চোখ এখন এক জায়গায় এবং তা হচ্ছে ২৬৫ আসনের মধ্যে ন্যূনতম ১৩৪ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন জোগাড় করা।
সরকার গঠনের জন্য ভোটের দিন থেকে তিন সপ্তাহ সময় পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি সরকার গঠনের জন্য তিন সপ্তাহের মধ্যেই দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাবেন। এমন জল্পনা রয়েছে, পিটিআই-সমর্থিত অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী পিএমএল-এনে যোগ দিতে পারেন। যেমন গত রবিবার পাঞ্জাবের পিটিআই সমর্থিত জয়ী এক প্রার্থী নওয়াজের দলে যোগ দিয়েছেন।
এদিকে এখন পর্যন্ত জয় পাওয়া ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী পিএমএল-এনে যোগ দিয়েছেন। গত রবিবার প্রথম যোগ দেন পিটিআইয়ের সমর্থন নিয়ে জেতা প্রার্থী ওয়াসিম কাদির। পরে আরও যোগ দিয়েছেন রাজা খুররম নওয়াজ, ব্যারিস্টার আকিল, পীর জহুর হুসেন কুরেশি, সরদার শমসের মাজারি এবং ব্যারিস্টার মিয়া খান বুগতি।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলি খান গতকাল বলেন, দলীয় আদর্শের সঙ্গে আপস করার পরিবর্তে তারা বিরোধী দলের আসনে বসতেও রাজি।
পিটিআই আগেই জানিয়েছে, তারা পিপিপি কিংবা পিএমএলএন; কারও সঙ্গেই জোট করবে না। তবে তারা এ-ও বলেছে, সরকার গঠনের চেষ্টা তারা পরিত্যাগ করেনি। আইনসভায়ই তারা এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্য দলে যোগ দিয়ে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী জেতানোর প্রক্রিয়া নিয়েও নতুন করে কিছু জানায়নি দলটি। তবে তারা এখনো কারচুপির অভিযোগ নিয়ে সরব।
গতকাল প্রেসিডেন্ট ডা. আরিফ আলভির দপ্তরে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন পিটিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক রউফ হাসান ও আইনজীবী উমাইর নিয়াজি। এ সময় তারা গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ‘কারচুপি’র ঘটনা প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।
সরকার গঠন নিয়ে নানামুখী আলোচনার মধ্যে নির্বাচনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মাওলানা সিরাজুল হক। তিনি জানান, নির্বাচনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে তিনি পদ ছাড়ছেন। অন্যদিকে নির্বাচনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে দলের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার পাশাপাশি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একসময়ের সহযোগী জাহাঙ্গীর খান তারিন। পিটিআইয়ের একসময়ের অন্যতম নেতা তারিন দল ভেঙে ইস্তেখাম-ই-পাকিস্তান (আইপপি) গঠন করেন। কিন্তু নির্বাচনে মাত্র দুটি আসন পায় এই দল। গতকাল তারিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তিনি রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়াচ্ছেন।