পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন নিয়ে সংকট বাড়ছে। জোট সরকার গঠনে মরিয়া পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ। এদিকে কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হলেও তাদের সরকার গঠনের বিষয়টি এখনও অন্ধকারে রয়েছে।
জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে রোববার লাহোরে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নওয়াজ শরিফ।
পাকিস্তানে নির্বাচন-পরবর্তী অনিশ্চয়তার মধ্যে সরকার গঠন নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। ডনের খবরে বলা হয়েছে, এর মধ্যে লাহোরে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সভায় তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তারা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে একযোগে কাজ করতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, পিপিপি এখনো সমঝোতার অংশ হিসেবে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিকে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে আগ্রহী। কিন্তু পিএমএল-এন এই ছাড় দিতে রাজি নয়।
সূত্রটি জানিয়েছে, পিএমএল-এন সমঝোতার অংশ হিসেবে পিপিপিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্টের স্পিকার এবং সিনেটের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
পিপিপি রাজি হলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি হতে পারেন রাষ্ট্রপতি। তিনি ইমরান খান সরকারের পতনের পর গঠিত শাহবাজ শরিফের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। খবরে বলা হয়েছে, পিপিপি পার্লামেন্টের স্পিকার পদে তাদের দলের রাজা পারভেজ আশরাফ কিংবা সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানিকে চাচ্ছে।
সরকার গঠন প্রশ্নে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারি, পিপিপির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি এবং শাহবাজ শরিফ আলোচনা করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভির, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব, শিজা ফাতিমা।
পিএমএলএন-পিপিপি জোট বাস্তবায়িত হলে পাঞ্জাবে পিপিপির সমর্থন পাবে পিএমএলএন। পিএমএলএন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রিত্ব পাবে। পিপিপি কয়েকটি মন্ত্রী পাবে। একইসাথে পিপিপি বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পাবে। সূত্র জানিয়েছে, পিপিপি সেইসাথে বেলুচিস্তানের গভর্নর এবং স্পিকারের পদও চেয়েছে।
এদিকে পিটিআই অভিযোগ করেছে, তাদের কাছ থেকে ৫০টি আসন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে এসব আসনে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও পরে অন্যদের জয়ী দেখানো হয়েছে। তারা দাবি করেছে, এই আসনগুলো এবং সেইসাথে সংরক্ষিত ৭০টি আসন থেকে তাদের হিস্যা দেয়া হলে তাদের মোট আসন হবে ১৭০। আর তাতে করে তারা একাই সরকার গঠন করতে পারে।
পিটিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লতিফ খোসা রোববার রাতে দাবি করেন, পিটিআই-সমর্থিত ৫০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয় করে ফরম ৪৫ দেয়া হয়েছিল। এসব আসনে ওইসব প্রার্থী কয়েক হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিল।
কেন্দ্র, খাইবারপাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। সরকার গঠন নিয়ে পিটিআই পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে আলোচনা করবে না বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের আলাপ হবে না। দলের ম্যান্ডেট গ্রহণ না করলে বিরোধী দল গঠন করবে পিটিআই।’
পাকিস্তানের নির্বাচনের ফল
পাকিস্তানে নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত আসন সংখ্যা অনুযায়ী ইমরান খানের পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র সদস্য ৯৩ জন, পিএমএল-এন ৭৫, পিপিপি ৫৪, এমকিউএম ১৭, অন্যান্য স্বতন্ত্র ৯, পিএমএল ৩, আইপিপি ২, বিএনপি ২টি আসন পেয়েছে। এছাড়া একটি করে পেয়েছে পিএমএল-জেড, পিএনএপি, বিএপি, পিকেএমএপি, এনপি একটি করে আসন।
পাঞ্জাবে পিএমএলএন পেয়েছে ১৩৮টি আসন, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ১১৬টি, অন্যান্য স্বতন্ত্র ২২টি, পিপিপি ১০টি, পিএমএল ৭টি, টিএলপি ১টি।
সিন্ধুতে পিপিপি ৮৩টি, এমকিউএম ২৮টি, পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র ১১টি, অন্যান্য স্বতন্ত্র ৩টি, জিডিএ ৩টি, জেআই ২টি।
খাইবার পাকতুনখাওয়ায় পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র ৮৪টি, স্বতন্ত্র ৮টি, জেইউআইএফ ৭টি, পিএমএলএন ৫টি, পিপিটি ৪টি, জেআই২টি, পিটিআই-পি ২টি, এএনপি ১টি।
বেলুচিস্তানে পিপিপি ১১টি, পিএমএলএন ১০টি, জেইউআই-এফ ১০টি, স্বতন্ত্র ৫টি, বিএপি ৪টি, এনপি ৩টি, বিএনপি ২টি, এএনপি ২টি, এইচডিটি ১টি, জেআই ১টি, আরএইচ হক ১টি, বিএনটি-এ ১টি।