পাকিস্তানের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চেয়েছিল তা পায়নি। স্পষ্টতই সেখানে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠিত হবে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি জোট করে সরকার গঠন করবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যারা সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলে, মানুষের অধিকারের কথা বলে, এই নির্বাচনে জন রায় নিশ্চয় তারা বুঝতে পেরেছে। পাকিস্তানের জনগণ সুস্পষ্টভাবে ইমরান খানের পিটিআই এর পক্ষে রায় দিয়েছে। ইমরান খানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার সব চেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা বা ডোনাল্ড লু’র মিশন সুস্পষ্টভাবে পাকিস্তানে ফ্লপ করেছে। এখন পাকিস্তান কি করবে? সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নানা রকম টালমাটাল অবস্থা দেখা যাবে। কারণ জনসমর্থন ইমরানের পক্ষে এবং ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে যে আসতে যাচ্ছেন, এটা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। আর এটি যদি হয়, তিনি আরও বেশি মার্কিন বিরোধী অবস্থান হিসাবে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হবেন। তাছাড়া সেনাবাহিনীর যারা জেনারেল আছেন তারাও ইমরান খানের জনপ্রিয়তার বিষয়টি অবহিত রয়েছেন। তারা জনপ্রিয় নেতার সঙ্গে একটি আপোসরফা করবেন। কারণ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যে বিপুল ক্ষমতা এবং বিত্ত বৈভব ভোগ করে তা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। আর এই কারণেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনিবার্যভাবে ইমরান খানের দিকে ঝুঁকবে। কারণ ইমরান খান প্রমাণ করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা কত প্রবল?
অবশ্য কোন কোন বিশ্লেষক মনে করতেই পারেন যে, তারা ইমরান খানকে আরও দমন করবে। আরও আইনের মারপ্যাঁচে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এবারের পুরো প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ইমরান খানের ক্ষমতা ক্ষমতাচ্যুতি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা, তার দলকে প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাঁধা প্রদান ইত্যাদি সব ঘটনার মধ্যেই পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে একটি সেনা বিরোধী মনোভাব প্রবলভাবে দানা বেঁধে উঠেছে।
সেনাবাহিনীর জানে যে, জনগণ যদি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তাহলে তারা কি করতে পারে? এ কারণেই পাকিস্তানের জান্তারা নতুন করে পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আর এই ভাবনার মধ্যে চীনের প্রভাব যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করবে না তা কি হলফ করে বলতে পারে। আর এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আস্তে আস্তে অর্থনীতিতে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা আইএমএফ এর কাছ থেকে বেলআউট নিয়ে কোন রকমে চলতে থাকা ব্যর্থ রাষ্ট্রটি চীনের দিকে যে হাত বাড়াবে তা বলাই বাহুল্য। মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কা যেভাবে চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে পাকিস্তান আগামী এক বছরের মধ্যে চীনের বলয়ের ভিতর প্রবেশ করতে বাধ্য হবে। এর ফলে এই উপমহাদেশে প্রায় মিত্রহীন হয়ে পড়বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকার অর্থে পাকিস্তান ছাড়া আর কোন মিত্র এই উপমহাদেশে ছিল না। আর পাকিস্তান যখন তারা হারাচ্ছে বা এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে ধরেই নেয়া যায় যে, পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হারিয়েছে তখন বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আরও বেশি নির্ভরতা বাড়বে। বাংলাদেশ নিয়ে তারা আরও বেশি মনোযোগ দেবে। এখন প্রশ্ন হলো যে, পাকিস্তানে তাদের ব্যর্থ মিশনের পর বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা কোন ধরনের নীতি গ্রহণ করবে। এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নীতিতে অত্যন্ত নরম এবং ভারত কেন্দ্রিক। বাংলাদেশের নির্বাচন ক্রুটিপূর্ণ বলা পরও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর পাকিস্তান অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিয়ই মার্কিনীরা বুঝতে পেরেছে যে, এই অঞ্চলে চাপিয়ে দিয়ে কোন কিছু তারা অর্জন করতে পারবে না।