শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের খাল পুনঃখনন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীসহ চারজনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার মূল অভিযুক্ত কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনা ঘটার পর আজ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কাকরকান্দি ইউনিয়নের সুতিয়ারপাড় বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ করেছে তার অনুসারী কৃষকরা।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় বরাদ্দে ১০ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুতিয়ার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ফুলপুর বান্দের বাজার থেকে কাকরকান্দি ইউনিয়নের রসাইতলা কাঁকরামারি পর্যন্ত এর সীমানা। কাজটি সুতিয়ার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ এর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এডহক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
তবে কাজ শুরু করতে গেলে আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল কৃষক বাধা প্রদান করে খনন কাজ বন্ধ করে দেন। খনন কাজের তদারকিতে থাকা এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস ও কাজি মঈন উদ্দিন এবং নালিতাবাড়ী কার্যালয়ের জেনারেল ফেসিলিটেটর মেহেদী হাসানকে মারধর করে। পরে পুলিশ এসে আহতদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এদিকে এ ঘটনায় রাতেই সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামসহ ১০ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে আজ শুক্রবার বিকেলে প্রধান আসামি আমিনুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় আহত সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান জানান, আমিনুল ও তার লোকেরা আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। আমরা ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল খনন কাজে বাধা প্রদান করে কিন্তু আমরা কাজ শুরু করতে গিয়েই বেধেছে বিপত্তি। পরে তারা আমাদের ওপর হামলা করে মারধর করে।
এ বিষয়ে শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে জানান, আমাদের কাছে আমিনুলসহ স্থানীয় কয়েকজন ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। ওই চাঁদা না পেয়ে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। পরে আমার অফিসের লোকদের ওপর হামলা করে আহত করেছে।
নালিতাবাড়ি থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ঘটনাটি আমরা অবগত। সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চলমান।