পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকালে। এরপর থেকে চলছে ভোট গণনা। প্রাথমিকভাবে আংশিক ফলাফল আসতে শুরু করে ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল থেকে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, নওয়াজ শরিফের পিএমএল(এন)-কে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআই।
শেষ খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩১টি আসনে গণনা শেষে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৫৪ আসনে। আর নওয়াজ শরিফের পিএমএল(এন) জয় পেয়েছে ৩৮ আসনে। তরুণ নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল জারদারি ভুট্টোর পাকিস্তান পিপল’স পার্টি নিশ্চিত করেছে ৩১টি আসন। এছাড়া আরো ১০০টিরও বেশি আসনে পিটিআই এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো । এখনও ১৪১টি আসনে ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয় (বৃহস্পতিবার ভোট হয়েছে ২৬৫টি আসনে)। এর মধ্যে কোনো দল বা জোটকে সরকার গঠন করতে ন্যূনতম ১৩৩টি আসন পেতে হবে।
এদিকে, পিটিআইকে দল হিসেবে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের নির্বাচনী প্রতীকও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর তাই ইমরানের দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেগুন প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ভোটে চমক দেখাচ্ছে ইমরানের দল।
অন্যদিকে, কারাগারে বন্দি রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সাবেক চেয়্যারম্যান ইমরান খান। শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে তার দল জয়ী হয়, তাহলে কী হবে? জেল থেকেই সরকার চালাবেন তিনি? নাকি জয়ের পর জেল থেকে ছাড়া পাবেন?
ইমরান খানকে সরকারি অফিস থেকে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তাকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। একদিকে তার অনুপস্থিতি অন্যদিকে প্রধান সহযোগীরা পলাতক বা জেলে থাকার কারণে পিটিআইয়ের দলীয় কাঠামো আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এবারের নির্বাচনে আদালতের নির্দেশে পিটিআইয়ের দলীয় প্রতীক ব্যাটকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে পিটিআই সমর্থিত সব প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছেন। বর্তমানে ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গওহর আলি খান। তবে তিনি ইমরান খানের মতো তেমন জনপ্রিয় নন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে আসতে পারেন তাহলে তারা নতুন করে একটি সাধারণ ব্যানারের নিচে এসে নতুন সরকার গঠন করতে পারেন।
ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেরা সরকার গঠন না করলেও, অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করতে পারবেন।
আর পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করলে তারা ইমরান খানের তিন মামলার ব্যাপারে আদালতেও যেতে পারেন। এছাড়া নতুন সরকার গঠনের পর ইমরান খানের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাও প্রত্যাহার করার জন্য পাকিস্তানের নির্বাচনী সংস্থার কাছে আবেদনও করতে পারেন তারা। সেই ক্ষেত্রে ইমরান জেল থেকে বেরিয়ে এসে ফের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।
এদিকে ভোটের আগে থেকেই নির্বাচনী কারচুপি নিয়ে বিরোধী প্রার্থীরা আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ভোটের দিন কথিত নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশটির মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপির উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে। পিটিআইয়ের তথ্য সচিব রৌফ হাসান দলীয় এজেন্টদের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ফলাফলে কারচুপির সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
দলীয়ভাবে পিটিআই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় এমনিতে পাকিস্তানে এবার কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সর্বাধিক আসন পেতে পারে। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, পিএমএল-এন ও পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্রদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সরকার গঠনের জন্য বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন যেকোনো দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।