গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ছয় থেকে সাত বছর ধরে মাদক কারবারে জড়িত। মামুন কক্সাবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় সাত থেকে আট হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে নির্জন স্থানে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ মূল পরিকল্পনাকারী মো. মামুনুর রশিদ মামুন ও তার সহযোগী মো. মুরাদকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
বাহিনীটির ভাষ্য, মামুন গত ছয় থেকে সাত বছর ধরে মাদক কারবারে জড়িত, যিনি জাবির মাদকসেবী শিক্ষার্থীদের কাছে মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন।
গ্রেপ্তার দুজনের বিষয়ে জানাতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে স্বামীকে আটকে রেখে ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চারজনকে আটক করে। পরের দিন ৪ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঢাকার আশুলিয়া থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, জাবির ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে নজরদারি বাড়ায় র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে র্যাব-৪, র্যাব-২ ও র্যাব-৫- এর অভিযানিক দল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ ৪৪ বছর বয়সী মো. মামুনুর রশিদ মামুনকে গ্রেপ্তার করে। র্যাবের অপর একটি আভিযানিক দল নওগাঁ সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার অন্যতম আসামি ২২ বছর বয়সী মো. মুরাদকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উভয়ই সংঘবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যা জানা গেল
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ছয় থেকে সাত বছর ধরে মাদক কারবারে জড়িত। মামুন কক্সাবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় সাত থেকে আট হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতেন।
বাহিনীটি আরও জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ছাত্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে মামুনের। তিনি মাঝে মাঝে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন এবং অন্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, গ্রেপ্তার মামুনের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে গত তিন থেকে চার বছর আগে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝে মাঝে ওই নারীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন। কিছুদিন আগেও মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হলে ওই নারীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবেন বলে জানান। পরবর্তী সময়ে মামুন ওই নারীর ভাড়া বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় তিন থেকে চার মাস অবস্থান করায় পরিবারটির সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়।
তিনি জানান, জাবির ঘটনার আগে মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর মামুনের কাছে ধর্ষণের ইচ্ছা পোষণ করেন মামুন। সে অনুযায়ী মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই নারীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানান, মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাই তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবেন। তাই মামুন ওই নারীর স্বামীকে মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ওই নারীর স্বামী মামুনের কথামতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে দেখা করেন।
পরবর্তী সময়ে মামুন ওই নারীর স্বামীকে তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব আরও জানায়, মামুন কৌশলে ওই নারীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন ব্যবহৃত কাপড় আনতে স্ত্রীকে ফোন দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে ওই নারীর স্বামী তার স্ত্রীকে ফোন করে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়গুলো একটি ব্যাগে করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে নিয়ে আসতে বলেন। ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ওই নারী তার স্বামীর কথামতো মামুনের ব্যবহৃত কাপড়গুলো একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন।
ওই সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন ও মামলার এক নম্বর আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে মুরাদকে ওই নারীর স্বামী ও মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের কক্ষে যেতে বলেন। পরে মুরাদ ওই নারীর স্বামীকে নিয়ে হলের কক্ষে অবস্থান করেন। ওই সময় মামুন ও মোস্তাফিজ ওই নারীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন এবং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন।
র্যাবের ভাষ্য, মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের কক্ষে গিয়ে ওই নারীর স্বামীকে বাসায় চলে যেতে বলেন। পরবর্তী সময়ে স্বামী ওই নারীর কাছ থেকে ধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা করেন। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মামুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করেন। মুরাদ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা হওয়ার পর তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপনে থাকেন। পরবর্তী সময়ে উভয়ই আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাবের হাতে ধরা পড়েন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মামুনের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাভোগ করেছেন। আর গ্রেপ্তার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তার নামে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্তে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে।