গণ পরিবহণবাংলাদেশ

যে কারণে রেলপথে ৬ বছরে ৫৫৮৭ লাশ

দেশে ছয় বছরে রেললাইন থেকে পাঁচ হাজার ৫৮৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই হিসাবে মাসে গড়ে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের বেশির ভাগের বয়স ১৯ থেকে ৫০ বছর। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এক হাজার ৬৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ওই বছর ১৪টি হত্যার ঘটনা বলে তদন্তে জানা গেছে। রেলওয়ে পুলিশের উপাত্ত থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
এসব মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনের নিচে পড়েছে, কেউ কেউ সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কা খেয়েছে বা কাটা পড়েছে, কেউ বা রেললাইনে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়ে তাড়াহুড়া করে রেললাইন পার হতে গিয়েও মারা গেছে অনেকে।

রেলক্রসিংয়ে (লেভেলক্রসিং) অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষেও ঘটছে প্রাণহানি। এসব ছাড়াও রেললাইনে মৃত্যুর আরো কিছু কারণ রয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের তথ্য মতে, ছয় বছরে রেললাইনে লাশ পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার ৫৮৭ জনের। এর মধ্যে চার হাজার ২৮৪ জন পুরুষ ও এক হাজার ৩০৩ জন নারী।

এই সময়ে ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
রেললাইনে মৃত্যুর ঘটনার একটি বড় অংশের কারণ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এসব মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনা না হত্যা, তা স্পষ্ট না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রেলওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব স্থানে হাইওয়ে ও রেলপথ পাশাপাশি, এসব স্থানে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। যেমন—রেললাইনের পাশে বাস থামল আর প্রস্রাব করতে নামল এক যাত্রী।

সে যদি রেললাইনের পাশে বা ওপরে দাঁড়িয়ে যায়, তাড়া থাকার কারণে বা অন্য কোনো শব্দে ট্রেন আসার বিষয়টি খেয়াল করতে পারে না। এভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে। কাজেই রেললাইনের আশপাশে থাকলে কানের ওপর ভরসা না করে চোখের ওপর ভরসা করাই ভালো। আর এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, চাইলেই কেউ যাতে চট করে রেললাইনের ওপর চলে আসতে না পারে।

২০২৩ সালের আগের পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্নেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রেললাইনে মোট লাশ উদ্ধার করা হয় এক হাজার দুজনের। ২০১৯ সালে ৯৮০ জনের, ২০২০ সালে ৭১৩ জনের, ২০২১ সালে ৭৭৮ জনের, ২০২২ সালে এক হাজার ৫০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার করা লাশের বয়স ও পেশা

রেললাইন থেকে গত ছয় বছরে যেসব লাশ উদ্ধার করা হয়, এর মধ্যে ৪৫৩ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে তিন হাজার ৬৪৯ জন। পঞ্চাশের বেশি বয়স এক হাজার ৪৮৫ জনের।

পেশা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়ে রেললাইনে ৩৭৭ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুই হাজার ৬১২ জন শ্রমজীবী ও ৪৫০ জন চাকরিজীবীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। একটা বড় অংশের পেশা সম্পর্কে জানা যায়। তাদের সংখ্যা দুই হাজার ১৪৮ জন।

সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারা দেশে রেলপথের অনেক লেভেলক্রসিং অরক্ষিত ও অননুমোদিত। এর মধ্যে কোনোটিতে নেই গেটম্যান ও সিগন্যাল বার। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে মানুষ।

রেলওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের লাইন দিয়ে কেউ রাস্তা বানালে সেটা যে প্রতিষ্ঠানই হোক, তাদের দায়িত্ব হলো রেল বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া। সেভাবে রেল বিভাগ লোকবলসহ অন্যান্য বিষয় দেখে অনুমোদন করাবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রেলওয়ের লেভেলক্রসিং অরক্ষিত। এখানে নিরাপত্তার কথা ভাবা হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button