মা-মেয়েকে ধর্ষণের আগে চুরির নাটক সাজান আ.লীগ নেতা
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আবুল খায়ের ওরফে মুন্সি মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে জেলা শহর মাইজদী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর কাজী মোখলেসে গৃহবধূকে ধর্ষণ করতেই চুরির নাটক সাজায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৫০)।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মুন্সী মেম্বার মো. মেহরাজকে (৪৮) দিয়ে ঘরের সিঁধ কাটিয়ে গরু বেপারী মো. হারুনকে (৪২) নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে তাকে ধর্ষণ করে। ওই সুযোগে মেহরাজ ওই নারীর পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণ করে। পুলিশ ঘটনার পরপরই সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল, কাঁচি, কালো প্যান্ট ও কানটুপি জব্দ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গ্রেপ্তার সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সীকে প্রধান আসামিও হারুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক পুলিশ আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে গতকাল রাত ৩টার দিকে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, হারুনের সহযোগিতায় ওই নারীকে খাট থেকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে মাটিতে কাঁথা বিছিয়ে আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বার ধর্ষণ করে। সে সরে গেলে হারুন তাকে পুনরায় পালাক্রমে ধর্ষণ করে। মেহরাজ পাশের রুমে থাকা ওই নারীর মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কানে থাকা স্বর্ণের দুল ও ঘরে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায়। ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি ধমকি দেয় তারা। মূলত হারুন গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহেরাজকে চুরি করতে ইন্ধন যোগায়। মেহরাজ রাজী হলে সিধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর হারুনের সাথে মুন্সী মেম্বারকে দেখে মেহরাজ অবাক হয় এবং বুঝতে পারে ধর্ষণ করতেই তাকে দিয়ে চুরির নাটক সাজায়।
ব্রিফিংয়ের সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মামলার প্রধান আসামি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ চৌধুরী।
তিনি জানান, মঙ্গলবার এক জরুরি সভা ডেকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বার মামলা থেকে নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দলীয় পদ ও দলের সকল কর্মকান্ড থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলো।
বহিষ্কারকৃত আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৫০) উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত গোলাপের রহমানের ছেলে।
উল্লেখ্য, উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে বসত ঘরের সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে।