মামলা, গ্রেপ্তারে জেরবার বিএনপি। নির্বাচন এলেই মামলার গতি বেড়ে যায়। জেলা-উপজেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার হিড়িক পড়ে। এবারো জেলায় জেলায় মামলা হয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে অন্তত ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির দাবি। এই নেতাকর্মীদের অনেকে এখনো কারাবন্দি। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকে কারাগারে। বিএনপি জানিয়েছে, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮২৫টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলা আসামির সংখ্যা ৫০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ জনের ওপরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা এবং আসামি রয়েছে খুলনা বিভাগে।
এই বিভাগে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ২৬ হাজার ৮৭১টি এবং আসামি করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জনকে। এরপরে মামলা বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে মামলা রয়েছে ১৫ হাজার ৭৯টি। তবে ঢাকার চেয়ে রাজশাহীর বিভাগে আসামির সংখ্যা বেশি। এই বিভাগে আসামি হয়েছেন ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ জন। আবার রাজশাহীর চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের মামলার সংখ্যা বেশি। এ বিভাগে মামলা রয়েছে ১৩৪৮২টি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাার্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখের উপরে গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় ৫০ লাখেরও বেশি আসামি রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর সাজা দেয়া হয়েছে। এসব করে বিএনপিকে ধ্বংস এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে দমন করা যাবে না।
রাজশাহী বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ১১ হাজার ৪৬১টি এবং আসামি সংখ্যা ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৫ জন। এরমধ্যে পাবনায় মামলা ১ হাজার ২২৬টি এবং আসামি ৫২ হাজার ৪০৫ জন, সিরাজগঞ্জে মামলা ২ হাজার ২৭০টি এবং আসামি ৫১ হাজার ৩৩১ জন, জয়পুরহাটে হামলা ১ হাজার ৩১৫টি এবং আসামি ৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৯০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মামলা ১ হাজার ৩৩১টি এবং আসামি ৪১ হাজার ১৭৩ জন, নওগাঁয় মামলা ১ হাজার ২১৪টি এবং আসামি ৪১ হাজার ১৫৫টি, নাটোরে মামলা ১ হাজার ৪৪১টি এবং আসামি ৫৭ হাজার ২৭০টি, রাজশাহীতে মামলা ১ হাজার ৩৩৫টি এবং আসামি ৫১ হাজার ২৭০টি, বগুড়ায় মামলা ১ হাজার ৩২৯টি এবং আসামি ৪৯ হাজার ৪৬৫ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ১৩ হাজার ৪৮২টি এবং আসামি সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৫জন। এরমধ্যে রাঙ্গামাটিতে মামলা ১ হাজার ৫৬০টি এবং আসামি ৪২ হাজার ৮৮৮জন, বান্দরবানে মামলা ১ হাজার ৫৫৩টি এবং আসামি ৪২ হাজার ৭২২ জন, ফেনীতে মামলা ২ হাজার ১৯৯টি এবং আসামি ৫০ হাজার ৪৩৮ জন, চট্টগ্রামে মামলা ২ হাজার ৩০১টি এবং আসামি ৫০ হাজার ৪৩৮ জন, কক্সবাজারে ১ হাজার ৫৬০টি এবং আসামি ৫২ হাজার ১৯২ জন, নোয়াখালীতে মামলা ২ হাজার ৫৮৩টি এবং আসামি ৫৫ হাজার ১৫২ জন, লক্ষ্মীপুরে মামলা ১ হাজার ৪০টি এবং আসামি ৪১ হাজার ৫৭০ জন এবং খাগড়াছড়িতে মামলা ৬৮৬টি এবং মামলা ৩৭ হাজার ২৩৫ জন।
কুমিল্লা: এখানে মামলা ৬ হাজার ২৬৫টি এবং আসামি সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ১৯৯ জন। এরমধ্যে চাঁদপুরে মামলা ১ হাজার ৩১৫টি এবং আসামি ৩০ হাজার ৫৫ জন, কুমিল্লা উত্তর জেলায় মামলা ১ হাজার ৬৫০টি এবং আসামি ৩৩ হাজার ৩৯০ জন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় মামলা ১ হাজার ৬১৭টি এবং আসামি ২৯ হাজার ৪২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা ১ হাজার ৬৮৩টি এবং আসামি ৪২ হাজার ৩২৪ জন।
রংপুর বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ৯ হাজার ৭০৪টি এবং আসামি সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৭১জন। এরমধ্যে রংপুরে মামলা ১ হাজার ২১০টি এবং আসামি ৪৭ হাজার ২৪৫টি, নীলফামারীতে মামলা ১ হাজার ১২২টি এবং আসামী ৪১ হাজার ১৫১জন, কুড়িগ্রামে মামলা ১ হাজার ৫৯টি এবং আসামী ৪৯ হাজার ৬৬৭ জন, দিনাজপুরে মামলা ১ হাজার ৩১৩টি এবং আসামি ৪৮ হাজার ৬৮১ জন, পঞ্চগড়ে মামলা ৯২০টি এবং আসামি ৩২ হাজার ৯৭০ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে মামলা ১ হাজার ১৮১টি এবং আসামি ৩৮ হাজার ৭৩৫জন, গাইবান্ধায় মামলা ১ হাজার ৪০৫টি এবং আসামি ৬৬ হাজার ৩৯১ জন এবং লালমনিরহাটে মামলা ১ হাজার ৪৯৪টি এবং আসামি ৫৬ হাজার ৬৩১ জন।
ঢাকা বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ১৫ হাজার ৭৯টি এবং আসামি সংখ্যা ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৫৩ জন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে মামলা ২ হাজার ৯১৩ জন এবং আসামি ৬৪ হাজার ৯৭৬ জন, মুন্সীগঞ্জে মামলা ৭৬৯টি এবং আসামি ৬৩ হাজার ৬ জন, টাঙ্গাইলে মামলা ১ হাজার ২৮৯টি এবং আসামি ৫০ হাজার ৭৬৯ জন, ফরিদপুরে মামলা ৭৪৭টি এবং আসামি ৩১ হাজার ৪০৬ জন, গোপালগঞ্জে মামলা ৯০৮টি এবং আসামি ২৯ হাজার ১৫২ জন, শরীয়তপুরে মামলা ১ হাজার ৪৫টি এবং আসামি ৪৭ হাজার ৩২০ জন, মানিকগঞ্জে মামলা ১ হাজার ১৮টি এবং আসামি ৫৭ হাজার ২৭১ জন, গাজীপুরে মামলা ১ হাজার ১১৮টি এবং আসামি ৬৪ হাজার ৪৬৬ জন, মাদারীপুরে মামলা ১ হাজার ৪২টি এবং আসামি ৩৪ হাজার ৭৬০ জন, ঢাকায় মামলা ২ হাজার ৩২৫টি এবং আসামি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৬ জন, নরসিংদীতে মামলা ১ হাজার ৪৪টি এবং আসামি ৩৪ হাজার ৭৯৬ জন, এবং রাজবাড়ীতে মামলা ৮৬১টি ও আসামি ২৯ হাজার ৬৩৫।
ময়মনসিংহ বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ৬ হাজার ৩৯৪টি এবং আসামি সংখ্যা ২ লাখ ৫১ হাজার ১১৭ জন। ময়মনসিংহে মামলা ১ হাজার ৬২১টি এবং আসামি ২৩ হাজার ৪১৫ জন, শেরপুরে মামলা ১ হাজার ২৪৪টি এবং আসামি ৪৯ হাজার ৭০১ জন, জামালপুরে মামলা ১ হাজার ৩৭৩টি এবং আসামি ৬৫ হাজার ৫৯১ জন, কিশোরগঞ্জে মামলা ১ হাজার ১৬২টি এবং আসামি ৪৪ হাজার ৭৬৬ জন, নেত্রকোনায় মামলা ৯৯৮টি এবং আসামি ৬৭ হাজার ৬৪৪ জন।
বরিশাল বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ৮ হাজার ৬৬২টি এবং আসামি সংখ্যা ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২১ জন। এরমধ্যে ভোলায় মামলা ১ হাজার ৪৯৮টি এবং আসামি ৪৯ হাজার ১২৯ জন, পটুয়াখালীতে মামলা ১ হাজার ৪৭৬টি এবং আসামি ৬৯ হাজার ১৩৭ জন, পিরোজপুরে মামলা ১ হাজার ৩৪৯টি এবং আসামি ৪২ হাজার ৯৯৩ জন, বরগুনায় মামলা ১ হাজার ১২৮টি এবং আসামি ৪১ হাজার ১০৪ জন, বরিশালে মামলা ২ হাজার ১টি এবং আসামি ৬০ হাজার ৫১ জন, ঝালকাঠিতে মামলা ১ হাজার ২১০টি এবং আসামি ৪১ হাজার ১০৭ জন।
খুলনা বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ২৬ হাজার ৮৭১টি এবং আসামি সংখ্যা ৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জন। এরমধ্যে সাতক্ষীরাতে মামলা ২ হাজার ৫৭৭টি এবং আসামি ৫৬ হাজার ৯৭১ জন, মাগুরাতে মামলা ১ হাজার ৬৮৮টি এবং আসামি ৫৫ হাজার ৮৪৩ জন, ঝিনাইদহে মামলা ১ হাজার ৬৪২টি এবং আসামি ৬৬ হাজার ৮০ জন, মেহেরপুরে মামলা ১ হাজার ২০৫টি এবং আসামি ৬০ হাজার ৬৪১ জন, বাগেরহাটে মামলা ১ হাজার ৩৩৯টি এবং আসামি ৫৫ হাজার ২৫৬ জন, যশোরে মামলা ১ হাজার ৭২৬টি এবং আসামি ৬১ হাজার ৫৭৯ জন, নড়াইলে মামলা ১ হাজার ৫০৭টি এবং আসামি ৬০ হাজার ১৬৭ জন, কুষ্টিয়ায় মামলা ১ হাজার ৯৫৮টি এবং আসামি ৬৬ হাজার ৮৪৯ জন, চুয়াডাঙ্গায় মামলা ১ হাজার ৬১টি এবং আসামি ৪২ হাজার ৮৩টি, খুলনায় মামলা ১২ হাজার ১৬৮টি এবং আসামি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৪ জন।
সিলেট বিভাগ: এই বিভাগে মামলা ৮ হাজার ৪৩৪টি এবং আসামি সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৭৪৪ জন। এরমধ্যে মৌলভীবাজারে মামলা ১ হাজার ৩২১টি এবং আসামি ৪৪ হাজার ৯২০ জন, সিলেটে মামলা ১ হাজার ১০১টি এবং আসামি ৭১ হাজার ৪২৯ জন, হবিগঞ্জে মামলা ১ হাজার ১৯১ জন, সুনামগঞ্জে মামলা ১ হাজার ২২১টি এবং আসামি ৫৪ হাজার ৮৪ জন। এ ছাড়া সকল মহানগরে মামলা ৩৫ হাজার ২৮৪টি এবং আসামি সংখ্যা ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫১৬ জন।
এদিকে গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে দলটির ৩১ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। এরমধ্যে কারা হেফাজতে বিএনপি’র ১২ নেতাকর্মী মারা গেছেন বলেও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিনা কারণে এবং বিনা অপরাধে নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার আটকের পর জামিনে মুক্তি পেলেও জেলগেটে তাদের ফের বন্দি করা হচ্ছে। ফলে কারাগারেই ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। তবে নির্যাতন ও নিপীড়ন করে গণতন্ত্র আদায়ের আন্দোলন কখনোই দমন করা যায়নি। এবারো যাবে না।