রাজধানী ঢাকায় আজ শনিবার কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। একই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে দেশের অন্যান্য মহানগরে। গত ৭ জানুয়ারি ভোট-পরবর্তী মাঠের এই প্রথম কর্মসূচির মাধ্যমে রাজধানীতে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। ঢাকার এই কর্মসূচিতে বিভাগের অন্যান্য জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জেলা সদরে এই কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
এক দফা দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে গতি আনতে চায় বিএনপি। এই লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করার পাশাপাশি নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে জেলার পর আজ ঢাকাসহ সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করবে। রাজধানী ঢাকার কর্মসূচিতে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। ভোট-পরবর্তী মাঠের প্রথম এ কর্মসূচিতে ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা অংশ নেবে। ৯০ দিন পর রাজপথের কর্মসূচিতে ফেরার মধ্যে দিয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির ব্যানারে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দুপুর ২টায় কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে। মিছিলটি কাকরাইল ও মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজার মোড়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।
কর্মসূচির বিষয়ে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ। তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকে ভোট বর্জন করে আমাদের আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছে। এ সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকায় নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিলের মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে অতীতের মতোই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এতে অংশ নেবেন। আশা করি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা করবে।’
বিএনপি নেতারা জানান, অতীতের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চান তারা। রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলে আশপাশের সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদেরও অংশ নিতে বলা হয়েছে। এই মিছিলে নেতাকর্মী ছাড়াও পেশাজীবীদের অংশ নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতাদের দাবি, এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বকেও বার্তা দেওয়া যাবে বিএনপি যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠেই রয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ প- হওয়ার পরদিন থেকে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত সরকার পতনের একদফা দাবিতে হরতাল, অবরোধ ও ভোট বর্জনের প্রচারণাসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পরে দুই দিন ভোট বর্জনে জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করে। দলটির নেতারা মনে করছেন, ভোট বর্জনের আন্দোলন সফল হয়েছে। তবে একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন সফল না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লান্তি ও হতাশা ভর করেছে। এছাড়া নেতাকর্মীদের অনেকেই মামলার কারণে কারাবন্দি, নয়তো ফেরারি অবস্থায় কাটাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দেশের সব জেলা সদরে কালো পতাকা মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। আজ রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগরে একই কর্মসূচি পালন করবে।
নেতারা জানান, বিএনপিসহ মিত্রদের ডাকে জনগণ ভোট বর্জন করেছে এটা বড় সফলতা। এর মধ্যে দিয়ে জনগণ কী চায় তার বার্তা পেয়েছে বিএনপি। এখন এক দফা দাবি আদায়ে মাঠের আন্দোলনের কোনো বিকল্প দেখছে না দল। আগের দাবির পাশাপাশি এখন নির্বাচন বাতিলের দাবিও যুক্ত করা হবে। নেতারা আরও জানান, ভোটের পর কোনো কঠোর কর্মসূচি না থাকার কারণে আগের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তারের তৎপরতা তেমন নেই। এ পরিস্থিতিতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় ও গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের পর এবার জেলা, মহানগরসহ সারাদেশে দলীয় অফিসের তালাও খুলতে শুরু করেছে নেতাকর্মীরা। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরাও ধীরে ধীরে মাঠে ফিরছেন। অতীতের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চান তারা। রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে বলে মনে করেন তারা। আশপাশের সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরাও থাকবেন।
No problem no benifed need Hasina sarkar