১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর থেকেই বোঝা গিয়েছিল বর্তমান মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ নয়। ৩৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভা যে আরও সম্প্রসারিত রূপ শীঘ্রই পাবে সেটি সকল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল নিশ্চিত ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে এবং এরপরই মন্ত্রিসভা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে পারে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের কাজটি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন করে কাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে সে ব্যাপারে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। অন্তত দুইজন সংরক্ষিত আসন থেকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর মন্ত্রিসভায় নতুন কারা অন্তর্ভুক্ত হবেন সে নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফরে যাওয়ার আগেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের কাজটি হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, মন্ত্রিসভা গঠন, সম্প্রসারণ বা রদবদল পুরোপুরি ভাবে প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ার। এ ব্যাপারে কোনরকম অনুমান করা সঠিক নয়। কারণ তিনি কখন, কীভাবে মন্ত্রিসভার রদবদল করবেন তা একান্তই তার বিবেচনাধীন বিষয়। তবে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যে কাজের পরিধি এবং কাজের চাপ তাতে বর্তমান মন্ত্রিসভা অত্যন্ত ছোট। এর সম্প্রসারণটি অনিবার্য।
বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায় মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে চর্চা হচ্ছে এবং নতুন মন্ত্রিসভায় কারা কারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কয়েকজন জনপ্রিয় নেতা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এবং আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এদের মধ্যে এস এম কামাল হোসেন এবারই প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন। অন্যদিকে মির্জা আজম সাত বারের সংসদ সদস্য। সাতবার সংসদ সদস্য হলেও মির্জা আজম মাত্র একবার ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যেখানে একজন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন।
অন্যদিকে বাহাউদ্দিন নাছিম একাধিকবার সংসদ সদস্য হলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রী হননি। প্রথম দফায় মন্ত্রিসভা গঠনের সময়েই এদের নাম আলোচনায় ছিল। তবে এদের মধ্যে অন্তত একজন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভায় রংপুর থেকে কোন মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত হননি। কাজেই বৃহত্তর রংপুরের কেউ এই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন এমন আলোচনা রয়েছে। অন্যদিকে আমলাদের মধ্য থেকেও একজন বা দুজন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চমক হিসেবে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং সাবেক এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তারা দুজনেই নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির গুঞ্জন ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কেউই মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। এবার তাদের মধ্যে কেউ থাকতে পারেন এমন আলোচনাও রয়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রিসভার যে সম্প্রসারণ হবে তা বর্তমান মন্ত্রিসভার গঠন এবং অবয়ব দেখলেই বুঝা যায়। কারণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালেয় একজন প্রতিমন্ত্রী দেয়া হয়েছে। এখানে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং একজন হেভিওয়েট নেতা এই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেখা যেতে পারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালেয়র মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যস্ত রয়েছে। এখানে একজন মন্ত্রী দেয়া হতে পারে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু বড় মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে একজন করে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।