নতুন শিক্ষাক্রমে সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ শিরোনামের লেখাটি নিয়ে ‘অহেতুক বিতর্কের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, গল্পটিতে সমাজের অন্যতম একটি জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ বা ‘হিজড়াদের নিয়ে একটি নিরীহ কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। একইসাথে সেখানে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি সমাজের বাকিরা কী ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করে তা বর্ণনা করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব মানুষকে সমান চোখে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।”
সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রকাশ্যে ওই বই থেকে ‘শরীফার গল্প’ অংশটি ছিঁড়ে আলোচনার জন্ম দেন। তার অভিযোগ, ওই গল্পে সমকামিতা ও যৌনতাকে উস্কে দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে। যারা ওই গল্পটি বই থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলছেন, তাদের ওই দাবি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করছে উদীচী।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সচেতন মানুষ যারা গল্পটি পড়েছেন, তারা সবাই একমত হয়েছেন যে এখানে শুধুমাত্র থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বিষয়েও সচেতনতা গড়ে তোলার ইতিবাচক প্রয়াস করা হয়েছে। সমকামিতা বা যৌনতার মত কোন বিষয়ের অবতারণা করা হয়নি। অথচ, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এরই মধ্যে একটি কমিটি করেছে সরকার যারা কিনা গল্পটিতে সামান্য পরিবর্তন আনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।”
উদীচী মনে করে, এ ধরনের কমিটি করার পর গল্পটিতে পরিবর্তন আনা হলে তা ‘পক্ষান্তরে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল’ হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে রাষ্ট্র তাদেরকে নাগরিক হিসেবে অনেক আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের বাকি সকল নাগরিকের মত ভোটাধিকারসহ অন্য সব নাগরিক অধিকারই তারা ভোগ করেন। দুঃসহ জীবনযাপন ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে তাদের মুক্ত করতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
“তৃতীয় লিঙ্গের অনেকেই তাদের মেধার পরিচয় দিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্মানজনক অবস্থানে থেকে দেশসেবা করছেন। তাদের এই পথচলাকে আরো সুগম করতে এবং কোমলমতি শিশুরা যাতে তাদের বিষয়ে কোনো বির্রপ বা বৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ না করে, সেজন্য সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
এর মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্ম ‘মানুষে মানুষে ভেদাভেদ শিখবে না’ বলে মনে করে উদীচী।
সপ্তম শ্রেণির বইয়ে ‘শরীফার গল্প’টি অবিকৃতভাবে রেখে দেওয়ার পাশাপাশি পাঠ্যক্রম নিয়ে ‘সব ধরনের মৌলবাদী, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত’ রুখে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।