অপরাধপ্রতারণা

বহুল আলোচিত ২৮৬ স্ত্রীর কেউ জাকিরের লাশ নিলেন না

বন্দি অবস্থায় মৃত্যু

একটি-দুটি কিংবা একশও নয়—১৪ বছরে প্রতারণার মাধ্যমে একাই বিয়ে করেছেন ২৮৬টি; কিন্তু মৃত্যুর পর তার মুখ দেখতে আসেননি সেই স্ত্রীদের একজনও। তিনি লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জাকির হোসেন বেপারি (৪৩)। প্রতারণা করে বিয়ের রেকর্ড গড়লেও শেষ সময়ে পেয়েছেন শুধুই তিক্ততা। জেলখানায় বন্দি অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর পর তার লাশ গ্রহণ করতে রাজি হননি কোনো স্ত্রী। এমনকি তার দাফনের সময়ও কেউ আসেননি।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ওই আসামিকে অন্য কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা যান জাকির। কারাবিধি অনুযায়ী ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, মৃত্যুর পর পুলিশের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয় ওই বন্দির। এরপর তার ভাইদের উপস্থিতিতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মেহেরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাকে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু সে সময় তার কোনো স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ২০০৫ সালে ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন জাকির। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে প্রতি মাসেই বিয়ে করতেন তিনি। বিয়ের পর কৌশলে কিংবা ভয় দেখিয়ে ওইসব নারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন টাকা। তা দিয়ে চাকরি বা ব্যবসা ছাড়াই বিলাসী জীবনযাপন করতেন। এভাবে ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত মোট ১৪ বছরে প্রতারণামূলক নানা কৌশলে ধনাঢ্য পরিবারের ২৮৬ নারীকে বিয়ে করেন। একাধিক নারীর প্রতারণার মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। মৃত্যুর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই বন্দি ছিলেন জাকির। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জীবদ্দশায় জাকিরের নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে তারা অস্বস্তিতে ছিলেন। নিজেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। এলাকায় লাশ নিলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় স্বজনরা প্রথমে তাকে ঢাকায়ই দাফন করতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য গ্রামে দাফন করা হয়।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নান্নু জানান, জাকিরের প্রতারণা করে বিয়ের খবর এলাকায় শুনেছি। তবে সে এলাকায় বেশি আসত না। জেলখানায় থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ার পর পরিবারের লোকজন লাশ এনে দাফন করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মিরপুরের এক নারীর করা ধর্ষণ মামলায় জাকিরকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও পুলিশ। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন পুলিশকে জাকির জানান, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে বিয়ে করতেন। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এক স্ত্রীর খবর আরেকজনের কাছে গোপন রাখতেন।

পুলিশ সে সময় জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকিরের চক্র ছিল। তার দলে নকল কাজি ও মৌলভিও ছিল। চক্রের কিছু নারী-পুরুষকে মা-বাবা ও ভাই-বোন বানিয়ে তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button