গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও লালখান বাজার মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি হারুন ইজহারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সম্বলিত লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন।
এর আগে হেফাজতে ইসলাামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হেফাজতের কর্মীদের নামে হওয়া সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাতিলের দাবিতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েও পরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মহাসমাবেশ স্থগিত করেছিল সংগঠনটি।
এরপর থেকে কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছে হেফাজতে ইসলাম- এই প্রশ্নে নাগরিকদের মধ্যে নানা জল্পনা শুরু হয়।
সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহারের সাথে কথা বলেছে পত্রিকার সাথে। মুফতি হারুন ইজহার বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। এটি বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য অবমাননাকর নীতি ও কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইতিবাচক প্রেসার দেওয়ার জন্য ভূমিকা রাখে। আমরা রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তবে দাবি আদায়ের জন্য, কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক মনে হয়।’
সংগঠনটির এখনকার কর্মসূচি ও কারাবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাওলানা মামুনুল হকসহ ৩ জন কেন্দ্রীয় নেতা কারাবন্দি আছেন। এছাড়া জেলা পর্যায়ে অনেকে আটক আছেন। আমরা তাদের মুক্তির জন্য নিয়মিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারের সাথেও আলোচনা করছি। একই সাথে শিক্ষাক্রমে ইসলাম-বিদ্বেষী সকল বিষয়বস্তু বাতিল চেয়েছি। ট্রান্সজেন্ডার ও এলজিবিটিদের অনুমোদন দিয়ে যেন কোনো আইন প্রণয়ন না করা হয়- সে বিষয়ে আমরা সরকারকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছি। তারা আমাদের দাবির প্রতি প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক হিসেবে সাড়া দিয়েছেন।’
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি জানান দেয় কাওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সেই সমাবেশ থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযান চালায়। এই অভিযানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতে, ২১ থেকে ৩০ জন নিহত হন। এরপর থেকেই সংগঠনটি প্রশাসনের নজরদারি ও চাপে বড় কর্মসূচি থেকে সরে আসে। ২০২০ সালে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক আল্লামা শাহ আহমেদ শফির মৃত্যুর পর সংগঠনটির মধ্য সরকারপন্থী ও সরকার বিরোধী দুই গ্রুপ তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এই তাণ্ডবকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীতে নারী কেলেংকারী ও জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িত কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ কয়েকজন আটক হন। তারা তিনবছর ধরে কারাবন্দি আছেন।