দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার গতি চলতি অর্থবছরে আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে; প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে নতুন পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। পুনর্বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। আর এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে যে বিনিয়োগ করে, সেটি ঋণাত্মক ধারায় নেমে গেছে। এফডিআই নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বিদেশি বিনিয়োগ কমার পেছনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাই বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, নির্বাচনের আগে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। আর দেশি বিনিয়োগ কমার কারণে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। কারণ দেশি উদ্যোক্তাদের মতো বিদেশি উদ্যোক্তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ ছাড়া বিনিময় হারের ঘন ঘন পরিবর্তন, সুশাসনের অভাব ও ব্যবসা সহজ করার সূচকে পিছিয়ে পড়াকেও দায়ী করেন তারা।
দেশে মহামারী করোনার আঘাত আসে ২০২০ সালের মার্চে। তার আগেই চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশ এতে আক্রান্ত হয়। ফলে বিশ্বজুড়েই ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে। বাংলাদেশেও নিট এফডিআইয়ে বড় ধাক্কা আসে। তবে করোনার প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা বেড়েছিল বিদেশি বিনিয়োগ। তবে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে হোঁচট খায় এ সূচক। গেল অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমে প্রায় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সেই কমার গতি আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে দেশে নিট এফডিআই এসেছে প্রায় ৬৭ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ০৮ শতাংশ কম। এ সময়ে আগের তিন মাসের চেয়েও নিট এফডিআই কমে গেছে। কমার এ হার প্রায় ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সাধারণত তিন পদ্ধতিতে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এগুলো হলো- নতুন পুঁজি তথা মূলধন হিসাবে, বিদ্যমান ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করে এবং এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে। এ সময় বিদেশিরা মূলধন (ইক্যুইটি) হিসাবে ১৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। এ সময়ে বিদেশিদের পুনর্বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। এ ছাড়া এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করে সেটি ঋণাত্মক ধারায় নেমেছে। এর পরিমাণ ঋণাত্মক ৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে নিট এফডিআই আসে প্রায় ৩১৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার। এটি আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ কম ছিল। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে নিট এফডিআই বেড়েছিল রেকর্ড প্রায় ৩৭ শতাংশ। ওই অর্থবছরে নিট এফডিআই আসে ৩৪৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২৩৭ কোটি ডলার, এটি ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে নতুন পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। পুনর্বিনিয়োগ কমেছে ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে যে বিনিয়োগ করে সেটি কমেছে ৩৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।