দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) নেটওয়ার্ক চালু হয় ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসাব মতে, দেশে সচল মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৯ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ১০ কোটির কিছু বেশি গ্রাহক ফোর-জির। প্রায় ৬ বছরে দেশে ফোর-জির যে গ্রাহক হয়েছে তাতে খুশি নন অপারেটররা। দেশের প্রায় শতভাগ এরিয়া ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হলেও এর প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। বিশাল বিনিয়োগ করে এখান থেকে এখনও রিটার্ন পাওয়া শুরু হয়নি। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে দেশে ফোর-জি গ্রাহক তৈরির উদ্যোগের কথা ভাবছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ফোর-জি মোবাইল সেটের সংখ্যা অপ্রতুল। দাম বেশি হওয়ায় অনেকেরই তা সাধ্যের বাইরে। কম দামের ফোনে যদি ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায় তাহলে এই গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে পারে। এই চিন্তা থেকেই দ্বিতীয় প্রজন্মের (টু-জি) বা ফিচার ফোনকে ফোর-জিতে (চতুর্থ প্রজন্মের ফোনে) রূপান্তরের উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের আশা, কম দামে গ্রাহকরা মোবাইল ফোন সেট পেলে ফোর-জি ব্যবহার করবে। গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির তরঙ্গ ব্যবস্থাপনা (স্পেক্ট্রাম ম্যানেজমেন্ট) বিভাগের কমিশনার শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা মোবাইল উৎপাদকদের ফোর-জি ফোন সেট উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে বলেছি। টু-জি ফোনকে কীভাবে ফোর-জি মোবাইল সেটে রূপান্তর করা যায় সে বিষয়ে আমরা ভাবছি।
তিনি মনে করেন, অনেক ব্যবহারকারী ফোর-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চান। কিন্তু তাদের কাছে স্মার্টফোন না থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না। আমরা দেখেছি একটি টু-জি ফোনে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করলে ফোনটিকে ফোর-জি বা ভোল্টি (ভিওএলটিই) সমর্থিত করা সম্ভব। তিনি বলেন, একটি ফিচার ফোনকে ফোর-জিতে রূপান্তর করে বিক্রি করতে হবে ৩ হাজার টাকায়। তাহলে কম খরচে ব্যবহারকারীরা ফোর-জি ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
এতে ফোর-জির ব্যবহারকারী বাড়বে। প্রান্তিক, অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের হাতে পৌঁছে যাবে ফোর-জি নেটওয়ার্ক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপের তথ্য বলছে, দেশের ১০ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। তবে নিজের এবং অন্যের ফোন (মা, বাবা, সন্তান ইত্যাদি) ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি। যদিও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির একটি প্রতিবেদন (২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত) বলছে, দেশে ফোর-জি গ্রাহক ১০ কোটি ১০ লাখের কিছু বেশি, আর থ্রি-জির গ্রাহক আড়াই কোটির বেশি। মোট ব্যবহৃত মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৯ কোটির বেশি।
জিএসএমএ’র রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৬ শতাংশ ফোর-জি ব্যবহার করেন। ২০৩০ সালে তা বেড়ে হবে ৭৩ শতাংশ। ফাইভ-জি ব্যবহারকারীর সংখ্যা হবে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ২২ শতাংশ। জিএসএমএ’র প্রতিবেদন মোবাইল ইকোনমি রিপোর্ট এশিয়া প্যাসিফিক ২০২৩-এ এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ফোর-জি সমর্থিত একটি স্মার্ট ফোনের দাম গড়ে ১০ হাজার টাকার মতো। একটি ফিচার ফোনকে রূপান্তর করে যদি ফোর-জি ফোন করা যায় তাহলে তা ৩ হাজার টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব। এই দামের মধ্যে ফোন কিনে সেই ফোনে নিম্ন আয়ের লোকজন ফোর-জি নেটওয়ার্ক উপভোগ করতে পারবেন।
মোবাইল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ট্রানশান বাংলাদেশের (আইটেল, টেকনো ও ইনফিনিক্স ব্র্যান্ড) প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক বলেন, একটি ফিচার ফোনের ফোর-জি চিপসেট কিনতে অতিরিক্ত খরচ হবে ৪-৫ ডলার। এরসঙ্গে আরও কিছু খরচ যোগ করে ফিচার ফোনকে ফোর-জিতে রূপান্তর কর সম্ভব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মোবাইল ফোন উৎপাদক বলেন, টু-জি ফোনে ফোর-জি এলে সেটটি হতে পারে এমন- স্ক্রিন একটু বড়, সেটটিতে ইন্টারনেট, মেইল, ফেসবুক ইত্যাদিতে যাওয়ার জন্য বিশেষ কোনও বাটন থাকতে পারে। সেই বাটনে চাপ দিলে সরাসরি অপশনগুলোতে চলে যাওয়া যাবে। ক্যামেরাও থাকবে একটু উন্নতমানের। ছবি শেয়ার করা যাবে অন্যের সঙ্গে।
জানা গেছে, ভারতে নকিয়া, আইটেল, মাইক্রোম্যাক্স, আইকল, এলজি (ফোল্ডিং ফোন), ইনটেক্স, স্নেক্সিয়ান, ক্যাট ব্র্যান্ডের ফিচার ফোনে ফোর-জি ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। যদিও এগুলোর মধ্যে কোনও কোনোটিতে টু-জি ও থ্রি-জি সুবিধা রাখা হয়েছে।
মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বিএমপিআইএ’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহীদ জানিয়েছেন, দেশে ফিচার ফোনে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালু করতে হলে টু-জি ফোন আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। ফিচার ফোনে যদি গ্রাহক অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, ছবি শেয়ার করতে পারেন, তাহলেই এই ফোন বাজার পাবে।