বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মী রাজনীতি ছেড়েছেন

গত এক বছরে বিএনপির সহস্রাধিক নেতা কর্মী রাজনীতি ছেড়েছেন। ঝামেলা মুক্ত থাকতে গ্রেপ্তার, মামলা হামলা ঠেকাতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্যই তারা রাজনীতি ছেড়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তরের একজন নেতার কথাই ধরা যাক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ছিল পাঁচটি মামলা। কিন্তু অক্টোবর থেকে তিনি আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নাই। বিএনপির নেতারা তাকে ফোনে পাচ্ছেন না। তিনি ফোন নম্বর বদলে ফেলেছেন। প্রথমে বিএনপির নেতারা মনে করেছিল, তিনি বোধহয় গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। রাজনীতির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। যে মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলাগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য।

তিনি বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই। এভাবে জীবন চলতে পারে না। তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, গত ১৫ বছর পরিবার অনেক কষ্টে ছিল। তিনবার তিনি জেল খেটেছেন। এই সময় দলের নেতারা তার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বরং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে সংসারে সময় দেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের এরকম আরেকজন নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি এখন মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। সেখানে কাজের সন্ধান করছেন। আরেকজন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এখন পালিয়ে কানাডায় চলে যাচ্ছেন। তার আগে থেকেই কানাডার পার্মানেন্ট রেসিডেন্টশীপ ছিল। এখন তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। তিনি তার পরিবারের সদস্যদেরকে জানিয়েছেন দেশে থাকলে তার মৃত্যু অবধারিত। রাজনীতির তার জন্য নয় এবং এই ভুল রাজনীতিতে তিনি বিপর্যস্ত। এ রকম উদাহরণ অনেক।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্র বলছে, সারাদেশে এরকম এক হাজারের বেশি নেতাকর্মী আছে, যাদেরকে এখন রাজনীতির মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না। নানা কারণে তারা নিজেদেরকে গুছিয়ে ফেলেছেন। এদের মধ্যে একটি অংশ নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করছেন। আর যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ, তারা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করছেন। কেউ বিভিন্ন রকম পেশা বেছে নিচ্ছেন। আর যারা একটু অবস্থাপন্ন তারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন মনে করেন, দলটির আর কোন ভবিষ্যৎ নেই। বিশেষ করে এ বার নির্বাচনের সময় বিএনপি যে ভুল রাজনীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এই রাজনৈতিক দলটির অস্তিত্ব বিলীন প্রায়। এরকম পরিস্থিতিতে রাজনীতি করা মানে হল নিজের ঝুঁকি নেওয়া।

তিনটি কারণে মূলত বিএনপির নেতারা রাজনীতি ছাড়ছেন।

১. দলের কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনৈতিক কৌশল: এই কৌশল দলের শুধু ক্ষতি করছে না, নেতাকর্মীদেরকেও বিপর্যস্ত করছে। এই কৌশলের সঙ্গে নেতাকর্মীরা একমত হতে পারছেন না।

২. সংকটকালে দল পাশে না থাকা: যারা রাজনীতি ছাড়ছেন তারা বলছেন বিভিন্ন সময় সংকটকালে দল তার পাশে থাকছে না। বিশেষ করে যখন তারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তখন এই সমস্ত মামলা এবং মামলার খরচ তাদেরকেই বহন করতে হচ্ছে। এটা তাদের জন্য এক বড় ধরনের সমস্যা।

৩. মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্ক: মামলা এবং গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে অনেকে দল ছাড়ছেন। যারা বিভিন্ন সময় বিএনপির নাশকতার ঘটনায় অভিযুক্ত হচ্ছেন এবং প্রায় প্রতিদিনই বাসা বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন আসছে। তাদেরকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। ফলে তাদের সাংসারিক জীবন অশান্তির মধ্যে পড়ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজনীতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কোন বিকল্প নেই বলে তারা মনে করছেন।

রাজনীতি ছাড়া বিএনপির একজন নেতা যিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরি করছেন তিনি বলেন, বিএনপি এখন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক দল বা সর্বহারা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আর এ রকম একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখাটাও বিপজ্জনক।

Exit mobile version