স্বতন্ত্ররা জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা মানবেন না

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সংসদীয় বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে। একই সাথে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে সংসদীয় দলের চিফ হুইপ নির্বাচিত করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি যেহেতু সংসদে মাত্র ১১ টি আসন রয়েছে, এই ১১ টি আসন নিয়ে তারা সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পাবে না। বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হলে তাদেরকে আরও অন্তত ১৯ জনের সমর্থন লাগবে।

যেহেতু সংসদে এবার স্বতন্ত্রের সংখ্যা অনেক বেশি, কাজেই এ ধরনের সমর্থন পেতে হলে স্বতন্ত্রদেরই দ্বারস্থ হতে হবে জাতীয় পার্টিকে। কিন্তু একাধিক স্বতন্ত্রদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্ররা জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মানতে রাজি নন। বরং তারা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি যদি বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বতন্ত্রদের সাথে বসতে হবে এবং স্বতন্ত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

গতকাল বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাপার সংসদীয় দলের প্রথম সভায় ১১ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন অংশ নেন। তারা এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা এবং বিরোধী দলের চিফ হুইপ মনোনীত করেন। সংসদীয় দলের সভায় প্রস্তাব আগামী রোববার স্পিকারকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

তিনি আরও বলেন, নৈতিকতার দিক থেকে দেখলে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। যারা স্বতন্ত্র হয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। তারা পদ ছেড়ে এসে জোট করবেন কি না সেটি নিশ্চিত নয়। আর করলেও সেটা কতটা নৈতিক এবং আইনি ভিত্তি থাকবে তা স্পিকার দেখবে। আমরা বিশ্বাস করি, স্পিকার জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, তারাই শুধু সরকারি দল হিসেবে বিবেচিত হবেন। যারা বিভিন্ন অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তাদের দলীয় পদ বা মর্যাদা যাই থাকুক না কেন তারা সরকারি দল হিসেবে বিবেচিত হবেন না। যদি না তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দেয়।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অবস্থান হলো তারা স্বতন্ত্রদের দলে ভেড়াবে না। বরং স্বতন্ত্ররা সংসদে স্বাতন্ত্র অবস্থান করে থাকুক—এটি আওয়ামী লীগ চায়। আর এই বাস্তবতায় জাতীয় পার্টিকে যদি বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে হয় তাহলে ৬২ জন স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীদের অন্তত ২০ জনের সমর্থন তাদেরকে নিতেই হবে। কিন্তু যারা স্বতন্ত্র হয়েছেন তারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন, আর যাই হোক, তারা জি এম কাদেরকে সমর্থন দেবে না।

একাধিক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা দুটি বিকল্প বলেছেন। এক তাদের পছন্দ অনুযায়ী জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে বিরোধী দলের নেতা তৈরি করা হবে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় গ্রুপের নেতা জি এম কাদের হতেই পারেন। কিন্তু সংসদীয় বিরোধী দলের নেতা অন্য কেউ হবেন। দ্বিতীয়ত, স্বতন্ত্ররা নিজেরাই বসবেন এবং ৩০ থেকে ৪০ জন যদি একত্রিত হয়ে তারা একটি গ্রুপ গঠন করেন এবং সেই গ্রুপের নেতা, উপনেতা এবং চিফ হুইপ নির্বাচন করে স্পিকারকে দেন তাহলেই স্পিকার তাদেরকেই বিরোধী দলের স্বীকৃতি দেবে। এটাই কার্যপ্রণালী বিধির বক্তব্য। তবে এখন সব কিছু নির্ভর করছে স্বতন্ত্ররা কতটুকু ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন এবং জাতীয় পার্টি স্বতন্ত্রদের সাথে কতটা সমঝোতা করতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কে বিরোধী দল হবে তা নির্ভর করছে আসলে আওয়ামী লীগের ওপরই। কারণ যে ৬২ জন স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন তারা সকলেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট এবং আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মী।

Exit mobile version