উন্নয়নবাংলাদেশ

শেখ হাসিনার সাফল্য অর্জন খুবই ব্যতিক্রম সারাবিশ্বে

সাফল্যের সোনালি ভেলায় টানা চারবার

রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠাই নয় শুধু, সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছে। একসময় বিয়ে করে সংসারজীবনও শুরু করেন। স্বামীর সঙ্গে পাড়ি জমান বিদেশে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে সবকিছু এভাবেই চলছিল। ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড সবই লণ্ডভণ্ড করে দেয়। মা-বাবা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারান সেদিনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে। বিধি যেন অগ্নিপরীক্ষায় ফেলে দিয়েছেন তাকে। স্বামীর সঙ্গে জার্মানি গেলেও থাকতে পারেননি। দিল্লিতেও আশ্রয় নিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। এতকিছু যার জীবনে ঘটেছে, তিনি আর কেউ নন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। যে জীবন আশ্রিত ছিল, সেই জীবন এখন বাঙালির আশ্রয়।

২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, সে বছর ২০ জুনে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষের সময় তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়। আরও ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি বিতরণের মাধ্যমে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।

১৯৮১ সালে আশ্রয়ে থাকা জীবন শেষ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি। শুরু করেন স্রোতের বিপরীতে তরী বাওয়া। সঙ্গে ছিল বাবা মুজিবের হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগও। কাউকে পরোয়া না করে পথ চলতে চলতে ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৬ সালে। পাঁচ বছর রাষ্ট্রপরিচালনা করে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা ছেড়ে আবারও রাজনীতি শুরু করেন। প্রায় একযুগ আবারও তরী বাইতে বাইতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান ২০০৯ সালে। সেই থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকার পরিচালনা, মানবিকতা, দৃঢ়তায় বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশ্বে অনন্য উচ্চতার আসনে আসীন হয়েছেন। দেশ-বিদেশের নানা গণমাধ্যম ও সুধীজনমহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন। টানা তিন মেয়াদে সরকারে থেকে বাংলাদেশে তাক লাগানো উন্নয়ন বিদেশি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নজর কেড়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পথ চলেও বাংলাদেশে এখন মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বনেতারা তার সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আন্তর্জাতিক পরিম-লে তিনি বেশ সমাদৃত নিজ কর্মগুণে।

শেখ হাসিনাকে যারা পছন্দ করেন তারা যেমন জানেন; যারা করেন না তারাও মানেন তিনি স্পষ্টভাষী। সাহসের সঙ্গে অকপটে কথা বলার নামই শেখ হাসিনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সোজাসাপ্টা কথা বলতে কখনো পিছপা হতে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। সোজা কথার সত্যতাও মিলেছে জনগণের কাছে। ‘জীবনের পরোয়া আমি করি না’ এ ঘোষণা দিয়েই রাজনীতিতে এসেছেন। সেটা মাথায় রেখেই অকপটে বলে চলেছেন আর স্থির করা লক্ষ্যে ও কক্ষে পৌঁছতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগও বারবার দিয়ে যাচ্ছেন দেশের জনগণ।

দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষসারির থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও সমালোচনা করতেন। সময় যত প্রবাহিত হতে লাগল, সোজাসাপ্টা কথা বলার দলের নেতাকর্মীদের কাছেই নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করলেন শেখ হাসিনা। প্রথম প্রথম অনেকের অপছন্দ হলেও এখন সবাই স্বীকার করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা যা বলেন, সত্যই বলেন। জেনেবুঝে বলেন বলেও অনেকের দাবি। শেখ হাসিনার অকপট বক্তব্য তার রাজনৈতিক জীবন ও রাষ্ট্রপরিচালনায় একাকার হয়ে গেছে।

২০১৬ সালে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ অভিমুখে। তখন সীমান্ত খুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে মানবিক নেতা হিসেবে খ্যাতি পান, যা তাকে বিশ্ববাসীর কাছে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

স্বৈরশাসনের যুগে যেমন আপস করেননি, তেমনি এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের সঙ্গেও আপস করেননি। অনড় অবস্থান থেকে নড়চড় না করার কারণে প্রায় এক বছর কারাবরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপসকামী রাজনীতির বিরুদ্ধে থাকা টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোহবিষ্ট হননি ক্ষণিকের জন্যও। শক্ত হাতে দল পরিচালনা করতে গিয়ে দলের প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সেখান থেকে তার দল আওয়ামী লীগকে বিচ্যুত হতে দেননি শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর আবার ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসেন। এরপর টানা তিনবার সরকার গঠন করেন তিনি।

শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরমেয়াদি গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তিনিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা ব্যবস্থা চালু করেন।

২০১৪ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের সঙ্গে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন শুরু, সদ্যবিদায়ী মেয়াদে আওয়ামী লীগের সরকার দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ ও চালু করে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ ছাড়া সরকারের সাফল্যের তালিকায় যোগ হয়েছে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের মধ্য দিয়ে এখন সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘টানা চারবার একটা দল ও একজন মানুষ সরকার গঠন করছে। এটা যেকোনো দিক থেকেই একটা লক্ষ্যযোগ্য ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই শেখ হাসিনা সফল। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের যে অভিজ্ঞতা এবং বারবার ওনার ওপর যে হামলা এগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা, এটাও বেশ লক্ষ্যযোগ্য। তবে এখনো যে তিনি ঝুঁকিমুক্ত তারও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এসব দিক থেকে যদি বলি তার যে রাজনৈতিক জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনা, অবশ্যই একটা পরীক্ষণযোগ্য বিষয়। বাস্তবিক, আমার কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে বিশ্বে নানামুখী চাপের মধ্যে নেতাদের টিকে থাকার কথা যদি ভাবি, তাহলে শেখ হাসিনা অন্যতম।’

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘তারপরই তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, নির্ভরযোগ্য পররাষ্ট্র নীতি এগুলোকে ভিত্তি করে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের হাল ধরেছেন শেখ হাসিনা। সে কারণেও তিনি বড় প্রশংসার দাবিদার হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের একটি সম্মানজনক জায়গায় আছে।’ তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার, তারপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে শক্ত বিরোধিতা ছিল দেশের মধ্য থেকে ও বাইরে থেকে। সেটা সামলে বিচারকাজ সম্পন্ন করা, সেটাও একটা বড় অর্জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এখন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব যারা আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নারী নেতাদের মধ্যে অনেক আগেই তার পরিচিতি বলতে গেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে। এখন আগামী পাঁচ বছর সবারই আশা যে, বাংলাদেশকে আরও ভালো একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা। দেশ পরিচালনার ভার নিয়ে শেখ হাসিনার সাফল্য অর্জন এটা খুবই ব্যতিক্রম সারা বিশ্বে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button