আওয়ামী লীগ আর ১৪ দলের বোঝা টানবে না

পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ঐক্যের ধারা সূচনা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে উদার গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে একসাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেছিল। সেই ধারায় স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৫ দলীয় জোট গঠন করেছিল। আর পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর গঠন করেছিল ১৪ দল।

১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতা আসার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে জাতীয় ঐক্যমতের ডাক দেন এবং ঐক্যমতের সরকার গঠন করেন। ওই ঐক্যমতের সরকারের তৎকালীন জাসদের আ. স. ম আবদুর রব এবং জাতীয় পার্টি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রী হয়েছিলেন। তার এই উদ্যোগ ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শিক ধারায় ১৪ দলীয় জোট গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই জোট একসাথে ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নেয়। যদিও ১৪ দলীয় জোটের বাইরে মহাজোট ছিল। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ১৪ দলের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে হাসানুল হক ইনুকে মন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ নির্বাচনের পর রাশেদ খান মেননকেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের এই ঐক্যমতের ধারায় প্রথম ছেদ পড়ে ২০১৮ সালে। এসময় আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতি অনুসরণ করে এবং মন্ত্রিসভায় কোন ১৪ দলীয় জোটের শরিককে নেয়নি। আর ২০২৪ সালে যে নতুন মন্ত্রিসভা আজ গঠিত হল সেই মন্ত্রিসভাতেও ১৪ দলের কোন শরিককে রাখা হয়নি। তবে ১৪ দলের শরিককে মন্ত্রিসভায় রাখা না রাখার চেয়েও ১৪ দলের অস্তিত্বই এখন একটা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। কারণ এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট দূরত্ব পরিলক্ষিত হয়। আওয়ামী লীগে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদেরকে মাত্র ছয়টি আসন দিয়েছিল। যদিও ১৪ দলের শরিকরা ২০ আসন চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র ছয়টি আসন নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

শুধু তাই নয়, নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের জন্য যে আসনগুলো ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, প্রত্যেকটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছিল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ১৪ দলের নেতা হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হন। ১৪ দল মাত্র দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। এ রকম বাস্তবতায় ১৪ দল টিকবে কি টিকবে না এই নিয়ে যখন প্রশ্ন তখন মন্ত্রিসভায় ১৪ দলকে বাদ দেওয়া হল। ১৪ দলকে তাহলে আওয়ামী লীগ কী চাইছে? আওয়ামী লীগকে এখন একলা চলো নীতি অনুসরণ করতে চাইছে? ১৪ দল থেকে মন্ত্রী নেই কেন? এই প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগ এখন ১৪ দলকে তাদের জন্য অ্যাসেড নয়, লায়াবিলিটি মনে করছে। কারণ ১৪ দলের শরিক দলগুলো গত ১৫ বছরে নিজেদের সংগঠন গোছাতে পারেনি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারেনি। এমনকি তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী ধারাও সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে বিভিন্ন রকম সুবিধা আদায় করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল। যেটি একটি আর্দশিক রাজনীতি ধারার জন্য কখনোই ইতিবাচক নয়। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ এখন ১৪ দলকে গুরুত্বহীন মনে করছে। আওয়ামী লীগের জন্য ১৪ দলের শরিকরা তেমন কোনো উপকার করতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তারা দেধারছে নিচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন চায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। আর এ কারণেই ১৪ দলের কাছ থেকে এক ধরনের দূরত্ব রাখার নীতি নিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ।

Exit mobile version