জাতীয়বাংলাদেশ

জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করার তাগিদ

তিনশ’ আসনে সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল যখন দেশের মোট জনসংখ্যা ছিলো সাড়ে ৭ কোটি। সেই সংখ্যা এখন ১৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ভোটার প্রায় ১২ কোটি হলেও, আসনসংখ্যা সেই তিনশ’ই আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সংসদ সদস্যের সংখ্যাও দ্বিগুণ হওয়া জরুরি। এতে ছোট হবে সংসদীয় এলাকা। বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন জনপ্রতিনিধিরা।

শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার। অর্থাৎ দেশের ৩শ’টি নির্বাচনী আসনের প্রতিটিতে গড় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার। বলা যায় ৪ লাখ।

এবারও নির্বাচনী প্রচারের সময়টা ছিলো এক মাসেরও কম। এই সময়ে নিজ এলাকার ৪ লাখ ভোটারের কাছে পৌঁছাতে হলে একজন প্রার্থীকে প্রতিদিন অন্তত ১৪ হাজার ভোটারের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। যা অসম্ভব।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্য প্রতি ৪৫-৫০ হাজার ভোটারের জন্য একটি আসন। সেখানে বাংলাদেশে চার লাখের বেশি। ফলে আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করে ছয়শ’ করা উচিত।

তিনি মনে করেন, আসন সংখ্যা বাড়ানোর ফলে দুই ধরনের সুবিধা হবে। একটি সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে, দলের মধ্যে সংসদ সদস্য হওয়া নিয়ে বিভক্তিও কমে আসবে।

আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, স্বাধীনতার পর জনসংখ্যা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামো যেমন ছিলো, তার চেয়ে এখনকার বাংলাদেশ আমূল বদলে গেছে।

ফলে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা বাড়ানোটা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে সবগুলো রাজনৈতিক দলের উচিৎ এগিয়ে আসা এবং এই বিষয়ে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া।

১৯৭২ সালে দেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় নির্বাচনী আসন করা হয়েছিল ৩০০টি। সে সময়ের ১৯টি জেলা বেড়ে এখন হয়েছে ৬৪টি। জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। কিন্তু নির্বাচনে আসন সংখ্যা সেই তিনশ’ই।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেড় লাখ জনসংখ্যার জন্য একটি করে সংসদীয় আসন বিবেচনা করা যেতে পারে। এনিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা ছোট হলে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব শক্তিশালী হবে। ভোটারদের সাথে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক হবে জোরালো।

আসন সংখ্যা বাড়লে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের নেওয়া নানা ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও সহজ ও কার্যকর হবে বলেও মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button