জাতীয়বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগের জনসভা

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের আজকের দিনে রক্তস্নাত বাংলার মাটিতে পা রাখেন।

আজ ১০ জানুয়ারি, বুধবার। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে রক্তস্নাত বাংলার মাটিতে পা রাখেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ ফেরেন তার আরাধ্য স্বাধীন বাংলাদেশে। পূর্ণতা পায় বিজয়। বঙ্গবন্ধু স্বয়ং এই প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। দিনটি স্মরণে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি রাখা হয়।

বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

পাকিস্তানের কারাগারে বন্দিত্বের ২৯০টি দিনের প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে লন্ডন-দিল্লি হয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। সে সময়ে প্রকাশিত পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, বিকাল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।

বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে বিমানে তুলে দেয়া হয়। ৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছান। বেলা ১০টার পর থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।

ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরদিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ জানুয়ারি সকালে তিনি ভারতের দিল্লিতে নামেন। সেখানে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতের পুরো মন্ত্রিসভা, প্রধান নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা স্বাধীন দেশের মাটিতে এসে পৌঁছবেন।

অসংখ্য মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগেতাড়িত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হওয়া লাখো মানুষের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’

এরপর প্রতিবছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এবারও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে দিনটি।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। এদিন পুরো জাতি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

দিনটি পালনে বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন এবং সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে সংগঠনের সব শাখাকে দিবসটি যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা ঘিরে ট্রাফিক নির্দেশনা

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। জনসভা উপলক্ষে রাজধানীর বেশকিছু এলাকার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন মঙ্গলবার এ তথ্য জানান।

জনসভা উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশ এলাকায় ভিভিআইপি গমনাগমন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিম্নলিখিত এলাকায় রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেয়া হবে।

সম্ভাব্য ডাইভারশন পয়েন্টগুলো হলো- কাঁটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, মৎস্য ভবন ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং ও ভিসি বাংলো ক্রসিং।

এ অবস্থায় নগরবাসীকে উল্লিখিত এলাকা/রোডগুলো পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগত গাড়িগুলো পার্কিং করার নির্ধারত স্থানগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল মাঠ (ভিআইপি), মলচত্বর, পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ, ফুলার রোডের দু’পাশ, দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ, নবাব আব্দুল গণি রোডের দু’পাশ এবং দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দু’পাশ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button