দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বলছে, আওয়ামী লীগই আবার সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসার সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পেয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিরোধী দলের আসনে বসতে রাজি নন বলে একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তারা বলেন, সংসদেও তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চান। তারা তো আওয়ামী লীগই। বিরোধী দলে কীভাবে বসবেন?
পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় এমন একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদে সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সরকারি দলের আসনেই বসতে চান। আইনজ্ঞদের মতেও, এ সুযোগ আছে। সরকারি দলে যোগ দিলেও সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এমন ইচ্ছা পোষণের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, আইনে কী আছে, জটিলতা কোথায় আছে এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টিকে (জাপা) বিরোধী দলের আসনে বসাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য কী করা যায় সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গত রবিবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর রাতে ফল ঘোষণা শুরু হয়। গতকাল সোমবার ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টির ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় একটি আসনে ভোট আগেই স্থগিত করা হয়েছিল। অন্য একটি আসনের একটি ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের কারণে ভোট বাতিল করা হয়েছে। সেখানে আবার ভোট হবে। তারপর ফল ঘোষণা করা হবে। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২টি আসন। অন্যদিকে ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। জাপা পেয়েছে ১১টি আসন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, জাতীয় পার্টিকে সামনে রেখেই সবকিছু ভাবা হচ্ছে। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে সংসদে একটি জোট করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটির মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের আসনে কে বসবে, সেই সমাধানে আসা যাবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতে আসা সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন। তাতে সংসদ সদস্য পদ যাবে না।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, জাপাই শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের আসনে বসবে। কীভাবে বসবে জানতে চাইলে তারা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাপাকে রেখে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিয়ে একটি জোট গঠন করা হবে। এ জোটই সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘বিরোধী দলে জাতীয় পার্টি থাকবে।’
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, নির্দিষ্ট কোনো দল বিরোধী দল হবে, তা কিন্তু নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠনের পর বাকি যারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবেন তারাই বিরোধী দল।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বেসরকারিভাবে বরিশাল থেকে নির্বাচিত পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভিভাবক। দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার পরিচালনার স্বার্থে আমাদের মতো কর্মীদের তিনি যেখানে কাজে লাগাবেন, আমরা সেটাই করব। সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার। যেহেতু আওয়ামী লীগ করি, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শে রাজনীতি করি, তাই বিরোধী দলের আসনে বসতে পারব না।’
মাদারীপুর থেকে নির্বাচিত তাহমিনা বেগম বলেন, ‘নেত্রী যদি আমাদের গ্রহণ করেন ভালো, না করলও ওই রকমই থাকব। আমি বিরোধী দলের আসনে বসব না।’
হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি পারিবারিকভাবে জয় বাংলার মানুষ। শেখ হাসিনার কর্মী, বঙ্গবন্ধু আমার নেতা। এর বাইরে আমার কোনো পরিচয় নেই।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যদি সুযোগ না দিতেন, আমি স্বতন্ত্র দাঁড়াতে পারতাম না। আমি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে চাই না।’
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর বলতে পারব। কিন্তু সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে চাই না।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারিয়ে দিয়ে পিরোজপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দিন আহমেদ মহারাজ। তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হলেও আমি আওয়ামী লীগ। সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসতে চাই না।’
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সম্মিলিত বিরোধী দলের তুলনায় জাতীয় পার্টির পরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। তখন ২৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি হন। কিন্তু ওই সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেননি তারা।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি তো সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তারা কীভাবে বিরোধী দল হবে। সংবিধান অনুযায়ী বিরোধী দল তো স্বতন্ত্র, তারাই হবে।’