৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এখন নতুন সরকার গঠন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে এবং সেই অনুযায়ী সংসদ সচিবালয়ের নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে টানা চতুর্থবারের মতো এবং মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এ নিয়ে কোন সংশয় বা সন্দেহ নেই। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। তবে এবারের মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন না থাকবেন—এ নিয়ে নির্বাচনের পরপরই জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে একটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং সময়ে নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আর এই কারণেই মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন, কারা থাকবেন না—এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতর নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। তবে মন্ত্রিসভায় মোট সদস্যের এক দশমাংশের বেশি অনির্বাচিত সংসদ সদস্য বা টেকনোক্রেট মন্ত্রী থাকতে পারবেন না।
বিদায়ী মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এ ছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার অন্তর্ভুক্তি হতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী হিসাবে জামালপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের কথাও শোনা যাচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রী না হলে বিদ্যুৎ জ্বালানি মন্ত্রী হতে পারেন—এমন কথা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
বিদায়ী মন্ত্রিসভার মধ্যে থেকে ড. হাছান মাহমুদ, যিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে, তিনি এবারের মন্ত্রিসভায় থাকবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আরেকজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনিও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়ামের সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী সভায় থাকবেন কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তবে তার থাকা না থাকা নিয়ে দু ধরনের মতামত রয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন৷ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক শিক্ষা সচিব ড. সাদিক মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে একাধিক সূত্র মনে করছে।
এবারের মন্ত্রিসভায় একটি রাজনৈতিক অবয়ব থাকতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের মন্ত্রিসভায় অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র মনে করছে। এই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান এবং শাহজাহান খানের মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন সাতবারের নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজম। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন নাকি চীফ হুইপ হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন এই নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা আছে।
এবার মন্ত্রিসভায় তরুণ মুখ থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চাঁদপুর থেকে নির্বাচিত ড. সেলিম মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মোহাম্মদ আলী আরাফাত যিনি ঢাকা-১৭ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, তারও মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, দ্বিতীয় বার এমপি হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা এবার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়াও কোনো কোনো সূত্র বলছে যে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন অথবা মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে এই সব কিছুই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর। এবার মন্ত্রিসভায় ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাখা হবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা আছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিকদের না রাখার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এবার মন্ত্রিসভায় থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।