দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলোচিত পার্টি তৃণমূল বিএনপি একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি। একটি আসনেও জয় জোটেনি কিংস পার্টি হিসেবে খ্যাত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেরও (বিএনএম)।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তার মধ্যে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র পাঁচটি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বাকি ২৩টি দলের কোনও প্রার্থী জয়ের দেখা পাননি।
যেসব দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, সেগুলো হলো, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও কল্যাণ পার্টি।
ঘোষিত ২৯৮টি আসনের ফলাফলের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছে ২২৪টি আসন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন। অন্য তিনটি দল মাত্র একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে।
তৃণমূল বিএনপি চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীর ভরাডুবি হয়েছে। সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করে তিনি হয়েছেন তৃতীয়। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ নৌকা প্রতীকে ৫০ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। শমসের মবিন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট।
নির্বাচনে শমসের মবিন চৌধুরী জামানত রক্ষা হলেও, দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের জামানত রক্ষা হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করে তৈমুর আলম খন্দকার সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়লাভ করেন।
এদিকে ফরিদপুর-১ সংসদীয় আসনে বিএনএম-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরেরও (নোঙর) জমানত রক্ষা হচ্ছে না। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান এক লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোটের বিপরীতে আবু জাফর ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন (ঈগল) পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৯৮৯ ভোট। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের হাতে নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি বেশ কিছু আসনে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও, তাদের কেউই জয়ী হতে পারেনি। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারীর পক্ষে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী সক্রিয় ছিল বলে আলোচনা থাকলেও তিনি নির্বাচনে জিততে পারেননি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের মধ্যে তিনটি দলের সঙ্গে ছয়টি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, জাসদ তিনটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পেয়েছে। ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তার বরিশাল-২ আসনে জয়ী হলেও, দলটির সধারণ সম্পাদক রাজশাহী-২ আসনের ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হন।
জাসদের তিনটি আসনের মধ্যে দলের বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন জয়লাভ করেন। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু তার কুষ্টিয়া-২ এবং অপর প্রার্থী লক্ষ্মীপুর-৪ আনের মোশরাফ হোসেন পরাজিত হয়েছেন। পরাজিত হয়েছেন পিরোজপুর-২ আসনের জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও। শরিক দলের পরাজিত চরজনের সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রাহী প্রার্থীদের কাছে হার মেনেছেন। এদিকে সমঝোতার বাইরেও এ দলগুলো আরো বেশ কিছু আসনে প্রর্থী মনোনয়ন দিলেও কেউ জয়ের মুখ দেখেনি।
আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও, নির্বাচনের আগমুহূর্তে পক্ষ ত্যাগ করে ভোটে অংশ নেয় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম কক্সবাজার-১ আসন থেকে জয়ী হয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী ছিল না। এ আসনে স্বতন্ত্র হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম নির্বাচন করলেও, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশই ইবরাহিমের পক্ষে ছিলেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি আসনে, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২টি আসনে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০টি আসনে, গণফোরাম ৯টি আসনে, গণফ্রন্ট ২১টি আসনে, জাকের পার্টি ২১টি আসনে, জাতীয় পার্টি ২৬৫টি আসনে, জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩টি আসনে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬টি আসনে, তৃণমূল বিএনপি ১৩৫টি আসনে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ১২২টি আসনে, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০টি আসনে, আওয়ামী লীগ ২৬৬টি আসনে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি আসনে, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৬টি আসনে, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬টি আসনে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১টি আসনে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫টি আসনে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ৫৬টি আসনে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৩৮টি আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ৫টি আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট ৪৫টি আসনে, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৪টি আসনে, সুপ্রিম পার্টি ৭৯টি আসনে, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩টি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬টি আসনে, সাম্যবাদী দল ৪টি আসনে ও গণতন্ত্রী পার্টি ১০টি আসনে প্রার্থী দেয়। আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জনসহ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী অংশ নেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। এর মধ্যে বিএনপিসহ ১৬টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে।