অগ্নিকান্ডবাংলাদেশ

ট্রেনে আগুন দিলো কারা?

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা: ফায়ার সার্ভিস

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৫ মিনিটে আগুন নির্বাপণের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বাহিনীটির পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, বেনাপোল থেকে কমলাপুরগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ৪টি বগিতে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। ৯টা ৫ মিনিটে সংবাদ পাওয়ার পর ৯টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট পৌঁছায়। এরপর ৮টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট অক্লান্ত পরিশ্রম করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান আছে এবং ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হলে হতাহতের সঠিক সংখ্যা বলা যাবে। উদ্ধার কার্যক্রম শেষে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি দুর্বৃত্তরা এই আগুন দিয়েছে। তদন্ত শেষে আসলে সঠিক কারণ বলা যাবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, যারা দগ্ধ হয়েছে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে আহতের সংখ্যা এখনো যানা যায়নি। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ কারো খোঁজে কেঊ আসেনি।

তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান বিষয়টি জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত: বিএনপি
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্র্রেনে আগুন লাগিয়ে হতাহতের ঘটনা নিঃসন্দেহে নাশকতামূলক কাজ এবং মানবতার পরিপন্থী এক হিংস্র নিষ্ঠুরতা। আমি এই ঘটনায় ধিক্কার জানাই, তীব্র নিন্দা জানাই। গত ২০১৪ ও ‘১৫ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন সেই মুহূর্তে অগ্নিসন্ত্রাসের নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মদদপুষ্ট দুস্কৃতিকারিরা জনদৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।

আজকের ঘটনাসহ সম্প্রতি সেই মনুষ্যত্বহীন প্রাণবিনাশী অগ্নিসন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনার দ্বারা সেই পুরনো কৌশলকেই ব্যবহার করা হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ জনসমর্থিত হওয়ায় এর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন মহল দিশেহারা হয়ে গভীর চক্রান্ত ও নাশকতার ওপর ভর করেছে। এই অমানবিক ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। পৃথিবীর সকল স্বৈরাচারই ভিন্নমতকে দমন করার জন্য সন্ত্রাস ও নাশকতার পন্থা অবলম্বন করে থাকে। দেশে-দেশে স্বৈরশাহী মানবতাবোধশূন্য ও অনুভূতিহীন হয়ে থাকে।

ট্রেনে আগুন: ঢামেক মর্গে নিহত চারজনের মরদেহ

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ১২ দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে এসব মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়।

ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) উপ-পরিদর্শক সেতাফুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ চারটি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে এদের মধ্যে একজন পুরুষ, একজন শিশু এবং বড় চুল দেখে একজনকে নারী হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। বাকি একজন পুরুষ না কি নারী তা দেখে বোঝার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘আজ রাতেই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহগুলো মর্গে রাখা হবে। শনিবার ময়নাতদন্ত হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলবে।’

এদিকে নিহতদের মধ্যে দুজন নাতাশা ইয়াসমিন নেকি (২৫) ও এলিনা ইয়াসমিন (৩০) বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।

নাতাশার ভাই খোরশীদ আহমেদ জানান, তাদের বাড়ি গেন্ডারিয়ায়। শুক্রবার সকালে স্বামী আসিফ মোহাম্মদ খানের (৩০) সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বেড়াতে গিয়েছিলেন নাতাশা। রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ট্রেনে ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। আগুনে আসিফ দগ্ধ হলেও ট্রেন থেকে বের হতে পেরেছিলেন। তবে নাতাশা বগিতেই পুড়ে মারা যান। আসিফকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

নাতাশার বাবার নাম শাকিল আহমেদ। এক বছর আসিফের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

অন্যদিকে মুরাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এলিনা ইয়াসমিন। পাঁচ মাসের ছেলে সৈয়দ আরফান ও ভাই-ভাবীসহ গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলা থেকে ঢাকায় মিরপুর ৬০ ফিটের বাসায় ফিরছিলেন এলিনা।

তবে এলিনার স্বামী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন ঢাকায় ছিলেন। মুরাদ জানান, আরফানের মামা (এলিনার ভাই) খবর দেন শিশু আফরান ও স্ত্রীকে নিয়ে বের হতে পারলেও বোন এলিনা ট্রেন থেকে বের হতে পারেনি। তাই তারা ধারণা করছেন এলিনা ট্রেনের ভেতর পুড়ে মারা গেছেন।

স্বজনরা জানান, ১০ দিন আগেই এলিনার বাবা মারা গেছেন। তাই কোলের শিশুকে নিয়ে তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন। আজ সেখান থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।

আজকে দুস্কৃতিকারিদের দ্বারা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগিয়ে যে ধ্বংস ও বিপদের পথ উন্মোচন করা হলো তাতে দেশ ও জাতিকে এক গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগিয়ে জীবনহানি ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে অনেককে মারাত্মক জখম করার কাপুরুষোচিত ঘটনায় জড়িত দুস্কৃতিকারিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহবান জানাচ্ছি। নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button