ফ্রান্সে ২০২৩ সালে বিদেশি অপরাধীদের ‘বহিষ্কার’ বেড়েছে ৩০ শতাংশ

ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ফ্রান্স থেকে চার হাজার ৬৮৬ জন বিদেশি বংশোদ্ভূত অপরাধীকে তাদের নিজ দেশ ‘ডিপোর্ট’ বা বহিষ্কার করা হয়েছে৷ আগের বছরের তুলনায় তা ৩০ শতাংশ বেশি৷

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) অভিবাসী অপরাধীদের বহিষ্কারের হার বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা৷

একই দিন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অডিটর বা নিরীক্ষা আদালত এক প্রতিবেদনে, অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে৷ ফরাসি নিরীক্ষা আদালত একটি সাংবিধানিক প্রশাসনিক আদালত৷ এটি সংসদ ও নির্বাহী শাখা থেকে স্বাধীন৷

আদালত জানায়, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে বেশ ‘কিছু ঘাটতি’ রয়েছে৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে তিন হাজার ৬১৫ জন বিদেশি বংশোদ্ভূত অপরাধীকে ফরাসি ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ এই সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে ২০২৩ সালে চার হাজার ৬৮৬ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে সরকার।

ফ্রান্সে গত বছর সন্ত্রাসী হামলায় শিক্ষক নিহতের ঘটনার পর থেকে জেরাল্ড দারমানা প্রতি মাসে ফ্রান্স থেকে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য দিয়ে আসছেন৷

বৃহস্পতিবার জেরাল্ড দারমানা ফরাসি আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান বা প্রেফেদের নিয়ে এক বৈঠকে একত্রিত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ বৈঠকে তিনি, বিদেশি বংশোদ্ভূত অপরাধীদের বহিষ্কার আরো ত্বরান্বিত করতে প্রেফেদের প্রতি আহ্বান জানান৷

২০২৩ সালে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা প্রধানত মাগরেব অঞ্চল, সাব-সাহারা আফ্রিকা এবং মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিক৷

তবে এই তালিকায় এফএসপিআরটি বা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে প্রাথমিক সন্দেহভাজন হিসেবে বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷ এটিতে ফৌজদারিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের ধরা হয়েছে৷
‘অকার্যকর’ নীতি

জেরাল্ড দারমানা গত বছরের পরিসংখ্যানকে স্বাগত জানালেও ফরাসি নিরীক্ষা আদালত জানিয়েছে, সরকারের নীতি অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করতে ‘অকার্যকর৷’

আদালতের বিশেষ পর্যবেক্ষক বা র‌্যাপোর্টাররা বলেন, প্রশাসন বর্তমানে একটি ‘অকার্যকর’ কৌশল পরিচালনা করছে৷ বাস্তবতার বাইরে গিয়ে বিপুলসংখ্যক ওকিউটিএফ নোটিশ বা ফ্রান্স ত্যাগের আইনি সিদ্ধান্ত জারি করা হচ্ছে৷

২০২২ সালে ফ্রান্সে মোট এক লাখ ৩৪ হজার ২৮০টি ওকিউটিএফ নোটিশ জারি করা হয়৷ যার বিপরীতে ওই বছর ১১ হাজার ৪০৬ জনকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ৷ এই সংখ্যার মধ্যে সাত হাজার ২১৪ জন ব্যক্তিকে বলপূর্বক অপসারণ করা হয়৷

একজন অভিবাসীর ফ্রান্সে অবস্থান করার পর তার প্রশাসনিক অবস্থা অনিয়মিত হয়ে পড়লে ওকিউটিএফ নামক আইনি সিদ্ধান্ত জারি করা৷

আদালত জানায়, “বিপুলসংখ্যক ওকিউটিএফ আদেশের সঙ্গে বহিষ্কারের পার্থক্যের মধ্য দিয়ে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতার অভাব ফুটে উঠেছে৷ পুরো সংখ্যার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ বহিষ্কার বাস্তবায়ন করা গেছে৷’’

নিরীক্ষা আদালতের বিচারক পিয়ের মস্কোভিচি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রাষ্ট্র ‘ডিপোর্ট’ কার্যকর করতে আরও ভালোভাবে উদ্যোগ নিতে পারে৷ বিশেষ করে বহিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় কনস্যুলার পাসের আবেদনগুলোকে একীভূত করে পদক্ষেপ নিতে পারে৷ অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সরকারকে বার্ষিক ১.৮ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট প্রদান করা সত্ত্বেও গৃহীত নীতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে৷’’
‘জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি’

২০২২ সালের গ্রীষ্মের পর থেকে প্রেফেদের কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো একটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি এবং অপরাধমূলক কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের ফ্রান্স থেকে বহিষ্কারের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করে সেগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত৷

নিরীক্ষা আদালতের মতে, গুরুত্ব দেয়ার এই উদ্যোগ ‘প্রাসঙ্গিক৷’

কিন্তু এই বিষয়ে, আইনজীবীরা এবং অভিবাসন সংস্থাগুলো কয়েক মাস ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে৷

২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত একটি এনজিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “জনসাধারণের শৃঙ্খলার জন্য হুমকির সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ৷ এটির মধ্যে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যক্তিকে নিয়মিত এ অজুহাতে প্রশাসনিক আটক কেন্দ্রে (সিআরএ) আটক করা হচ্ছে৷’’

‘জনশৃঙ্খলার জন্য গুরুতর হুমকি’ কিভাবে নির্ধারিত হবে সেটি নিয়েও বেশ বিতর্ক আছে৷ কখনও কখনও অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া সত্ত্বেও একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনেক ব্যক্তিকে এই তালিকায় অন্তভুর্ক্ত করা হয়ে থাকে৷

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ফরাসি অধিকার সংগঠনগুলো এই ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের আপত্তি জানিয়ে আসছে৷

Exit mobile version