নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের বিরুদ্ধে সমর্থক দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বরাবর এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনবাগের ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আজ দুপুরের দিকে আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের লোকজন ভোট চাইতে আমার বাড়িতে আসেন। তখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো মন্দ খেতে সাদা খামে করে কিছু টাকা দিয়ে যায় তারা। আমি সেসময় টাকা নিতে অস্বীকার করলে আমাকে ‘দেখে’ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আমার গায়ে হাত তোলা হয়, আমাকে আঘাত করা হয়। সাদা খাম না নেওয়ায় আমি ও আমার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের লোকজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন কেশারপাড় ইউনিয়নের আরেক নারী ভোটার। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, আমার বাড়িতে মানিক ভাইয়ের লোকজন ‘টাকার খাম’ ধরিয়ে ভোট চাইতে আসলে আমি সরাসরি তাদের বলেছি, আমি ‘নৌকার’ লোক। শেখ হাসিনার মার্কা ছাড়া কোথাও ভোট দেব না। যতদিন বেঁচে আছি বঙ্গবন্ধুর ‘নৌকা’ মার্কাতেই ভোট দেব। আমাকে টাকা দিয়ে কিনতে পারবে। এলাকার সাধারণ গরিব ভোটারদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিকের লোকজন জোর করে টাকার খাম দিয়ে ভোট কিনতে সক্রিয় রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত স্বতন্ত্র প্রার্থীরি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
একই অভিযোগ ডুমুরুয়া ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, মইশাই বাজারে তার দোকান রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের লোকজন ভোট চাইতে এসে তার হাতে ‘টাকার খাম’ ধরিয়ে দিয়ে পরিবারসহ কাঁচি প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ‘চাপাচাপি’ করতে থাকেন। তিনি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ৭ জানুয়ারির পর এ এলাকায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।
বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করেছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ডুমুরুয়ার অশ্বদিয়া বাজারের বাসিন্দা স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে ডুবানোর জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীদের জড়ো করেছে মানিক, ব্যাপক অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। সেই সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের ওপর নির্যাতন করছে। আমাকে হত্যা করার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে নারকীয় হামলা চালিয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে মানিকের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। হুমকি-ধামকিতে নৌকার কর্মীরা দমে যায়নি। নৌকার বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ এলাকার সাধারণ ভোটাররা স্বতন্ত্র প্রার্থী মানিকের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্থ। এতে এ আসনের ভোটাররা ৭ জানুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থীর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আর তাই ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া এসব অভিযোগ লিখিত আকারে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোরশেদ আলম।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া একটি হাইস গাড়িতে করে বিভিন্ন মহিলাদের দিয়ে ভোটারদের মাঝে জোরপূর্বক টাকা প্রদান করছেন। চিঠিতে আতাউর রহমান তার লোকজন দিয়ে ও সাবেক মেয়র আবু জাফর টিপুর সহধর্মিনীকে দিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাইস গাড়ি ও অটোরিকশা যোগে জোরপূর্বক টাকা প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। এতে করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহযোগিতা কামনা করেন নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলম।
নানান অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সঙ্গে কিছু ছবিও পেয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।