মাত্র তিন দিন পরই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এর আগেই ভোটের মাঠ থেকে ঘোষণা দিয়ে একে একে সরে যাচ্ছেন বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থীরা। যদিও এখন আর অফিশিয়ালি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই এবং ব্যালট পেপারে প্রতীক ও প্রার্থীর নাম থেকে যাবে, তারপরও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ১৬টি আসনে জাপার প্রার্থীরা ভোটের লড়াই থেকে সরে গেছেন। আরও অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার যে ২৬টি আসনে সমঝোতা হয়েছে, সেগুলো ছাড়া অন্য আসনগুলো থেকেই প্রতিদিনই কেউ না কেউ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিচ্ছেন।
জাপার প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘কয়েকটি আসনে জাপার কয়েকজন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়নি। এতে দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তবে, আমাদের দলের প্রার্থীদের আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে প্রার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেবো, সে সামর্থ্য আমাদের নেই। তাছাড়াও প্রার্থীদের নানান হুমকি-ধমকিসহ আরও অনেক সমস্যা আছে।’
ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো জাপার প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন তারা। কারো অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া ২৬টি আসনের বাইরে জাপার যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বা করছিলেন—দল তাদের খোঁজ রাখেনি, দলীয়ভাবে আর্থিক সহযোগিতাও করা হয়নি। এতে তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। নিজ নিজ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের এবং আওয়ামী লীগের পদধারী ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগ এনে তারা বলেছেন, এতে ভোটের মাঠে থাকাকে তারা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। এমনকি, নির্বাচনে নিজেদের থাকা না থাকার মধ্যে কোনো তফাতও দেখছেন না সরে যাওয়া এই প্রার্থীরা।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠের বাইরে চলে যাওয়া জাপার প্রার্থীদের অনেকে এমনও বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ২৬টি আসনে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থীদের অনেকেই নিজেদের পোস্টার-লিফলেটে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ বলে উল্লেখ করেছেন, কেউ কেউ পোস্টার-লিফলেটে নিজেদেরকে ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত’ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার ঐ ২৬টি আসনে জাপার প্রার্থীদের কেউ কেউ পোস্টার-লিফলেটে দলীয় প্রধান জিএম কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ব্যবহার করেছেন। এমন অভিযোগ তুলে তারা বলেছেন, ‘তাহলে আমরা কারা? আমরা আমাদের পোস্টারে কী লিখব?’
বহু নাটকীয়তা শেষে গত ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছিলেন—২৮৩টি আসনে দলের প্রার্থীরা ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে, ঢাকা-৬ আসনে দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ঢাকা-১৩ ও ১৪ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ ২৬ জন ঐদিনই নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বাস্তবে জাপার প্রার্থী ছিল ২৫৭টিতে। এই ২৫৭ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় জাপার যেই ২৬ জন প্রার্থীর আসনে ‘নৌকা’র প্রার্থী নেই—তারা নিজ এলাকায় ভোটের মাঠে পুরোদমে সক্রিয়। অবশিষ্ট ২৩১ জনের মধ্যে আট-দশ জন নিজ আসনে ‘নৌকা’র বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে জোর প্রচারণায় নামলেও বাকিরা আছেন নামেমাত্র।
নামেমাত্র থাকা জাপার প্রার্থীদের কেউ কেউ এবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েই ভোটের মাঠ থেকে উঠে গেছেন। সর্বশেষ গতকাল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের জাপার প্রার্থী মো. সামসুদ্দিন খান এবং দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনের মাহবুব আলম। আগের দিন নির্বাচন থেকে সরে যান হবিগঞ্জ-২ আসনের (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) জাপার প্রার্থী শংকর পাল এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন। ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) ও গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর একাংশ) আসনে জাপার প্রার্থী ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন। একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বরিশাল ৫ (সদর) ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং বরগুনা-১ (তালতলী-আমতলী) আসনের খলিলুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাপার মো. শাহানুল করিম। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে জাপার প্রার্থী ছালাউদ্দিন খোকা সরে দাঁড়ান।
আসলে ভোটের মাঠ থেকে জাপার প্রার্থীরা কেন একে একে সরে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে জাপার দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা এবং সরে দাঁড়ানো প্রার্থীদের কারো কারো সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে সরে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রথমত, নির্বাচনি খরচ হিসেবে দলের কেন্দ্র থেকে আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়া। দ্বিতীয়ত, কেউ কেউ নিজেদের আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে গোপন সমঝোতায় গিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরে গেছেন। তৃতীয়ত, ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে দলের কেন্দ্র থেকে নিরুত্সাহিত না করা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় পাওয়া ২৬টি আসনের সিংহভাগ আসনেই যেন জাপার প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনদের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা।
নির্বাচন থেকে জাপার প্রার্থীদের সরে যাওয়ার বিষয়ে দলটির একটি সূত্র জানায়, জাপার প্রার্থীদের নির্বাচনি খরচ হিসেবে দলীয়ভাবে তহবিল পাওয়া গেছে—এমন বিশ্বাস দলের প্রার্থীদের বেশির ভাগেরই। এই বিশ্বাস থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আর্থিক সহযোগিতা নিতে কয়েকদিন আগে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে যান। তবে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের তাদেরকে দেখা দেননি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও এ সময় নিজ নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন। সূত্রের দাবি, দল থেকে আর্থিক সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন ও যাচ্ছেন।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জাপার প্রার্থী সামসুদ্দিন খান গতকাল কাপাসিয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্বাচনে প্রচার চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাতে নেই। তাছাড়া আমি অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়েছি।’ ভোটের ছয় দিন আগে গত রবিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) ও গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর একাংশ) আসনে জাপার প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সরকারের একতরফা নির্বাচন, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছি। মূলত আমি আর পারছি না, যার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’
হবিগঞ্জ-২ আসনে (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো জাপার প্রার্থী শংকর পাল বলেন, ‘এই নির্বাচনে থাকা না থাকা একই কথা। তারা (জাপা) ২৬ আসন নিয়ে খুশি। তারা লিখছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তাহলে আমি কী সমর্থিত লিখব।’
বরিশাল-৫ (সদর) ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসন থেকে সরে যাওয়া জাপার ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বললেন, ‘ইসির কর্ম এবং অন্যান্য আচরণে মনে হচ্ছে তারা একটি দল এবং সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে, আবারো প্রহসনের একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এখানে আছে একটিমাত্র দল। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাই উত্তম।’
তবে, দলীয় প্রার্থীদের একের পর এক নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অনেক স্থানে ক্ষমতাসীনদের হুমকি-ধমকির মুখে টিকতে পারছেন না আমাদের দলের প্রার্থীরা। কেউ কেউ নির্বাচনের ব্যয় বহন করতে পারছেন না। এসব কারণে কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।’
জাদের ভিতরে মানবতাবোধ আছে জারা বাংলাদেশের মাটিকে নিজের মাতৃভূমি মনে করে জারা মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মুশরিকদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করতে চায় একমাত্র তারাই মীরজাফর দেরকে চিনতে ভুল করেনি
God
আমিন