ড. ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড হলেও জেলে যেতে হচ্ছে না
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২৫ হাজার অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।
আজ বেলা ৩টার সময় ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। তবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় এক মাসের জামিন প্রদান করা হয়।
সেই সঙ্গে তার সাথে থাকা একই মামলাল অন্য আসামিদেরও একই শাস্তি দেওয়া হয়।
এর আগে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে রায় পড়ার সময় আদালত বলেন, তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দায় এড়াতে পারেন না।
আজ সোমবার (০১ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ১২ মিনিটে ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে মোট ৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের মূল অংশ পড়া শুরু করেন।
এর আগে ১টা ৪০ মিনিটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদাল প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত হন।
গত ২৪ ডিসেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। একইসঙ্গে এই মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
জেলে যেতে হচ্ছে না ড. ইউনূসকে, আপিলের শর্তে জামিন
আপাতত জেলে যেতে হচ্ছে না নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তার ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হলেও তাকে এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে জামিন দেন আদালত।
যে দোষ করিনি, তার শাস্তি পেলাম: ড. ইউনূস
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যে দোষ করিনি, সেই দোষের শাস্তি পেলাম। এটাকে ন্যায়বিচার যদি বলতে চান, তাহলে বলতে পারেন।’
আদালত থেকে বের হয়ে আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে ইংরেজি বছরের প্রথম দিন। সারা দুনিয়া এটা পালন করে বছরের প্রথম দিন হিসেবে। এটা আনন্দের দিন হিসেবে সবাই উৎসব করে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের প্রথম দিন আজকে। আমরা আজকে আদালতে এসেছিলাম রায় শোনার জন্য। এসে মনটা ভরে গেল, আমার বহু বন্ধু-বান্ধব এখানে পেয়ে গেলাম, যাদের সঙ্গে আমার বহুদিন দেখা হয়নি।’
ড. ইউনূস বলেন, এরা আজকে এসেছে, এই আনন্দের দিনে যে কী রায় হয় দেখার জন্য। আমার কী অবস্থা দাঁড়াবে। আমি কিন্তু খুবই খুশি তাদের দেখে। মনটা ভরে গেল। বহুদিন পরে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে, ছুটিতে এসেছে। এক জায়গায় একত্র হওয়ার সুযোগ পেলাম আমরা।’
মামলার রায়ের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার মামুন সাহেব (ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন) ব্যাখ্যা করবেন। তবে আমাদের মনে দুঃখটা রয়ে গেল আজকে। এই আনন্দের দিনে এই আঘাতটা পেলাম।’
ড. ইউনূস দায় এড়াতে পারেন না
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে রায় পড়ার একপর্যায়ে আদালত এ কথা বলেন। আদালত বলেন, তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দায় এড়াতে পারেন না।
আদালত বলেন, গ্রামীণ টেলিকম শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে এটা প্রমাণিত। তাদের প্রতিষ্ঠান দেশের চলমান আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা নিজস্ব আইনে শ্রমিকদের যে চাকরি বিধি করেছে সেটা শ্রম আইন অনুসরণ করে নয়।
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রায় প্রসঙ্গে খুরশিদ আলম
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে। যে যত বড় হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকালে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যখন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন শ্রম আইনের অধীনে, শ্রম আইন মানতে হবে। আপনি নোবেল লরিয়েট, তার মানে এটা না—শ্রম আইন আপনি মানবেন না।’
খুরশিদ আলম বলেন, ‘দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যে মামলা দায়ের করেছিল, সেটি আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’