২০২৩ সালে যেসব দেশের সাথে পেরে ওঠেনি পশ্চিমারা

২০২৩ সাল, পশ্চিমাদের জন্য বছরটি কেমন ছিল? আলোচিত কিছু বিষয়ে নজর দিলেই বোঝা যায়, বিশ্বে এখন কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছে পশ্চিমা মোড়লরা। একদিকে বছরজুড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোণঠাসা ইউক্রেন অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতাকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে মুসলিম বিশ্বের তোপের মুখে ইউরোপ-আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের আধিপত্য বিস্তারে এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে ব্যাকফুটে চলে গেছে পশ্চিমারা।

২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলমান। তবে, পশ্চিমাদের সহায়তায় প্রথম বছর জেলেনস্কি বাহিনী চোখে চোখ রেখে লড়াই করলেও ফ্রন্টলাইনের চিত্র এখন অনেকটাই একপেশে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন কৌশলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে কোনঠাসা করে ফেলেছে ইউক্রেনকে। ফলে বাধ্য হয়ে এখন অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছে পশ্চিমারা। একপ্রকার কিয়েভকে অস্ত্র সহায়তা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ভ্লাদিমির পুতিনকে থামাতে পশ্চিমাদের কোনো পদক্ষেপই সফল হয়নি। বরং পশ্চিমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে নিয়েছেন ঘাঘু পুতিন।

অন্যদিকে, ৭ অক্টোবর গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে বসে ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে আতে ঘা লাগে পশ্চিমাদের। ইউক্রেন ও গাজা দুই যুদ্ধে তাদের বিপরীতমুখী অবস্থানে মুসলিম বিশ্বে বেড়েছে ক্ষোভ। এমনকি নিজ দেশের জনগণের তোপের মুখেও পড়তে হচ্ছে পশ্চিমা নেতাদের।

এতদিন ইসরায়েলকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কথা বলে আসছিল আমেরিকা। সেই আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এক প্রকার কিক আউট করতে উঠেপড়ে লাগে চীন। অনেকটা সফলও হয়েছে বেইজিং। পশ্চিমাদের টেক্কা দিয়ে সৌদি-ইরান সম্পর্কে সেতু হয়ে দাঁড়ায় দেশটি।

এদিকে লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণ আর অন্যদিকে ইরাক, সিরিয়ায় হামলার শিকার হচ্ছে তাদের সামরিক ঘাঁটি। এই অঞ্চলের আরেক শত্রু ইরান নিষেধাজ্ঞা আর হুমকি-ধমকির তোয়াক্কা না করেই বাড়িয়ে চলছে সামরিক সক্ষমতা।

বছরজুড়ে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া। পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি মস্কো সফরে গিয়ে পশ্চিমাদের বেশ চাপেই ফেলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।

এদিকে কানাডায় শিখ নেতা হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নয়াদিল্লির তিক্ততা বেড়েছে। এছাড়া বছরের শেষ দিকে মস্কো সফরে গিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পশ্চিমাদের আরেক বন্ধু দক্ষিণ আফ্রিকা চীন-রাশিয়ার সাথে যুদ্ধজাহাজ নিয়ে চালিয়েছে মহড়া।

পশ্চিম আফ্রিকার মালি, বুরকিনা ফাসো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পর নাইজারেও আধিপত্য হারিয়েছে ইউরোপ। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিমাপন্থি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ফরাসি সেনারা। তাই বলা যায়, বিশ্ব রাজনীতিতে ২০২৩ সাল ছিল পশ্চিমাদের জন্য দুঃস্বপ্নের একটি বছর।

Exit mobile version