ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ‘হালাল’ মদের ব্যবসা, কালো টাকার শোরগোল, দুধের ফেরিওয়ালা
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, মদ-মাদক, কালো টাকা, দুধের ফেরিওয়ালা, নিরাপদ ও শান্তির শহর-এসবেই সরব ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের ভোটের মাঠ।
একজন বলছেন মদের ব্যবসা হালাল। টাকাও সাদা। আরেকজন দুধের ফেরিওয়ালা। সোচ্চার মাদকের বিরুদ্ধে। ‘মাদক না দুধ’ কিনবেন, সেটা নির্ধারণের ভার ছেড়ে দিয়েছেন তিনি জনগণের ওপর। বিষয়টি নিয়ে তার সমর্থকরা সোচ্চার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যানার- ফেস্টুনেও রয়েছে মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা।
জেলায় সর্বাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী এই আসনে। তবে ৮ প্রার্থীর মধ্যে চোখে পড়ার মতো প্রচার-প্রচারণা ৩ জনের। হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও (কাঁচি) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) শাহ জামাল রানা (নোঙ্গর)। আসনটিতে এবারের ভোটের লড়াই নানা কারণে টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন- নিয়মনীতি ভঙ্গ করা যে শুধু পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে তা নয়। মাইকিংয়ের ক্ষেত্রেও তা নয়। আরও অনেক ক্ষেত্র আছে। যেমন গণভোজনের আয়োজন করা এটা নিয়মনীতির ভেতরে পড়ে না। মানুষকে টাকা দিয়ে ইনফ্লুয়েন্স করা এটাও নিয়মনীতির ভেতরে পড়ে না। কালো টাকার অপব্যবহার রোধ করাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। এসব ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সক্রিয় হলে ভালো। তারা যেহেতু নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন আমি এটা আবেদন রাখবো। আমি আশঙ্কা করছি এবং লোকমুখে নানা কথা শুনছি। লোকমুখে যেহেতু শোনা এনিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করছি না। তবে আমি যখন কালো টাকার বিরুদ্ধে বলছিলাম নির্বাচন কমিশনারের সামনে তখন কেউ কেউ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এটা আমার একটু সন্দেহের বিষয়।
বিএনএম প্রার্থী শাহ জামাল রানা বলেন টাকার ছড়াছাড়ি। বাংলাদেশে ৩শ’ আসন আছে। কোথাও এমন আছে কিনা আমার জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধিতে বলা আছে ২৫ লাখ টাকা সর্বোচ্চ খরচ করতে পারবে। আমি বিভিন্ন জায়গায় যেখানে প্রচারণায় যাচ্ছি ফেস্টুন-বিলবোর্ড যে হারে দেখছি তাতে মনে হয় কোটি কোটি টাকার পোস্টারই করছেন তারা। সেই ভাবে আমরা কিন্তু তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। ব্যয়বহুল, টাকা খরচ করে মাঠা থাকাটা কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জের মতো ব্যাপার হয়ে গেছে। কিছু মানুষ তো আছে টাকা যেদিকে সেদিকে দৌড়াতে শুরু করে। ভোটটা দিলে কি হবে না হবে, ৫ বছর ভালো থাকতে পারবে কিনা সেটা চিন্তা করে না। বেচাকেনার একটা বিষয় কিন্তু থাকে।
ফিরোজুর রহমান ওলিও বলেন- ‘কালো টাকা কীভাবে থাকে সরকার থাকলে। সেদিন এখানে আলাপ হয়েছিল নির্বাচন কমিশনার যে আসছিলেন। আপনি যে কালো টাকা বলছেন, আপনি তো সংসদ সদস্য আপনি কেন কালো টাকার বিচার করেন না। তারা ক্ষমতায় থেকে বলে যে, এটা কালো টাকা। তাহলে তাদের কাজটা কি। কালো টাকা কী। আল্লাহর রহমতে তিলে তিলে এখানে এসেছি। ৫২ বছর নিজে ব্যবসা করে এই জায়গায় এসেছি। তারা জনগণের ইয়া পাচ্ছে না, মানুষকে খোঁচায়া খোঁচায়া যা বের করতে পারে। এগুলো জনগণ জানে বুঝে। কালো টাকা যার আছে তারে তো ধইরা নিয়া জেলে ঢুকানোর কথা। অবৈধ টাকা থাকলে বের করুক না।’
এই আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র ফিরোজুর রহমান ওলিও (কাঁচি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জামাল রানা (নোঙ্গর), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মো. নূরে আজম (মোমবাতি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মুজিবুর রহমান হামিদী (বটগাছ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ (আম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সোহেল মোল্লা (একতারা), জাসদের আবদুর রহমান খান ওমর (মশাল)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অর্থাৎ সদর আসনের মোট ভোটার ৬ লাখ ২১ হাজার ৫৮৪জন। এরমধ্যে সদরের ভোটার ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৩২ আর বিজয়নগরের ২ লাখ ৭ হাজার ৬৫ জন।