বাংলাদেশের নির্বাচন ও ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি

দ্য টেলিগ্রাফের সম্পাদকীয়:

পরবর্তী সরকার নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবুও ভোটগ্রহণের আগেই, এই অনুশীলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে অস্থিতিশীল করার হুমকি দেয়। ভারতও সতর্ক না হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বিজয়ে হয়তো পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে (দ্য টেলিগ্রাফ ‘pyrrhic’-ফিয়েরিক শব্দ ব্যবহার করেছে যার অর্থ- যে বিজয় বিজয়ীকে এমন বিধ্বংসী আঘাত দেয় যে, এটি পরাজয়ের সমতুল্য এবং দীর্ঘমেয়াদী অগ্রগতির ক্ষতি করে)।

সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করেছে। যা নির্বাচনকে বর্তমান সরকারের কর্মক্ষমতার ওপর গণভোটের চেয়ে কম এবং দেশের গণতন্ত্রের পরীক্ষা হিসেবে গড়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ সরকার তার জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি দায়বদ্ধ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমনপীড়ন, বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস হামলা ও একাধিক গ্রেপ্তার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করে আসছে, যা উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উজ্জ্বলতা নষ্ট করেছে।

ভারত ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সাথে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বিগত নির্বাচনগুলোর বিপরীতে ভারত যেন আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্যে সমর্থন না দেয়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে বিএনপি। তবুও বাংলাদেশে নয়াদিল্লি ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে রয়েছে- এমন ধারণা এখনো বিস্তৃত।

ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে যদি জনগণের মনোভাব আরও তীব্র হয়, তাহলে ভারতও প্রায় নিশ্চিতভাবে প্রতিক্রিয়া অনুভব করবে – যেমনটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় সাম্প্রতিক নির্বাচনে ঘটেছে।

এদিকে, বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবও কেবল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই শেখ হাসিনার ক্ষমতায় ফিরে আসা এই অঞ্চলে তার প্রধান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ভারতের হাতকে শক্তিশালী করবে না। যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অনুভূতিকে সমর্থন করা উচিত হবে না ভারতের জন্য।

যাইহোক, বাংলাদেশে যে কোনো রাজনৈতিক উত্থানের সম্ভাবনা থেকে ভারতকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ নীতি নিয়ে ভারতের ‘রেড লাইন’ টানার সময় এসেছে।

Exit mobile version