বর্তমান সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দিয়েছে বিএনপি। ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করা, কর ও ইউটিলিটি বিল না দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি। নেতাকর্মীদের আদালতে মামলার হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকতেও নিদের্শ দেওয়া হয়েছে সুদূর লন্ডন থেকে। এই অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে দলটি। কর্মসূচি অনুযায়ী ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর লিফলেট বিতরণসহ গণসংযোগ এবং ২৪ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ ডেকেছে বিএনপি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সারাদেশে অবরোধ। কিন্তু সকাল থেকেই রাস্তাঘাটের চিত্র অন্য সাধারণ দিনের মতোই। সড়কে চলছে সকল ধরনের যানবাহন। আছে যাত্রী এবং গাড়ি উভয় চাপ। অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দফার কর্মসূচি সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন ধরনের রেখাপাত করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। আন্দোলনের মাঠে দেখা নেই দলটির নেতাকর্মীদের। দলের নেতাকর্মীদের মামলার হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও আজ সকালে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গনে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদেরও ফাইলপত্র নিয়ে অন্যান্য দিনের মতোই আদালত প্রাঙ্গনে দেখা গেছে। এর আগে একই চিত্র দেখা গেছে অসহযোগ আন্দোলনের ঠিক পরের দিন বৃহস্পতিবার। সেদিনও নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
আদালত প্রাঙ্গনে দলের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা বেশ কিছু নাশকতার মামলার শুনানি আজ। কারাগারে থাকা এসব মামলার আসামিদের হাজির করেছে পুলিশ। আর দলটির যারা জামিনে রয়েছেন তারা শর্ত অনুযায়ী শুনানির নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত প্রাঙ্গনে বিএনপির একজন কর্মী জানান, তার বিরুদ্ধে ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মতিঝিল থানায় ২৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন বলে জানান তিনি। আজ বেশ কয়েকটি মামলায় হাজিরা রয়েছে। সেই হাজিরা দিতেই তিনি আজ আদালতে এসেছেন।
এদিকে নেতাকর্মীদের আদালতের হাজিরা দেওয়ার খরবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তিনি এ সমস্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি অসহযোগের আহ্বান জানানোর পরও কেন আদালতে এসেছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি এক কর্মী বলেন, ‘২০১৩ সালের মামলায় আগেই তিনি কারাভোগ করেছেন। পরিবার অনেক কষ্ট, হয়রানি ভোগ করেছে। তাছাড়া এখন অসহযোগ আন্দোলন করার মতো পরিস্থিতিও নেই। অস্তিস্ত রক্ষা করাই এখন বড় দায়। এক্ষেত্রে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো কঠিন হবে। তাই হরতাল-অবরোধের মতো এ কর্মসূচিও ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৮ নং ওয়ার্ডের একজন যুবদল নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলায় হাজিরা না দিলে এক-দুই ডেট পর জামিন বাতিল করা হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি করা হবে। এ সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তাদের আত্মগোপনে থাকতে হবে অথবা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে হবে। আত্মগোপনে থাকলে তাদের অনুপস্থিতিতে আদালত বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবে। এতে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় দলের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। নেতারা কেউ তাদের খোঁজ নেননি। তাই মামলায় হাজিরা না দিয়ে নতুন করে বিপদ ঘাড়ে নিতে চান না অধিকাংশ কর্মী।