সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এ ধরনের চরম কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে সহিংসতার জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে একের পর এক চাপ ও সংকটে পড়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় অর্ধশতাধিক কার্যালয় এখনো তালাবদ্ধ। অসংখ্য নেতাকর্মী কারাবন্দি। গ্রেপ্তার এড়াতে বাকিরাও আত্মগোপনে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্র নেতাকর্মীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে জনজীবনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির প্রভাব কমে আসছে। এ অবস্থায় অসহযোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘অসহযোগ কর্মসূচি অনেক বড় বিষয়। বিএনপি অসহযোগের যে আবেদন জানিয়েছে, তা যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য শেষ ধাপের কর্মসূচি। আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণেই কিন্তু বিএনপি এ ধরনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।’
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের এ আন্দোলনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে তারা লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। সব রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই অসহযোগের মধ্য দিয়ে সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিএনপি ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে মোটা দাগে পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন, ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত রাখা, কর, খাজনা ও ইউটিলিটি বিলসহ সরকারের সবরকম পাওনা পরিশোধ স্থগিত রাখা, ব্যাংকে লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মামলায় আদালতে হাজিরা থেকে বিরত থাকা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার জনমতের বিরুদ্ধে নির্বাচনের নামে ‘তামাশা’ করতে যাচ্ছে। এ কারণে কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের এই সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত হবে না। সেজন্যই এই সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপি সরকারের ডামি নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে সংঘাতের পথ থেকে বেরিয়ে এসে একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ উন্মুক্ত করতে দেশবাসী এই কর্মসূচিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মী রাজপথে নেমেছেন। এ দেশের সব মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামের সফলতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এরই মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ শুরু হয়েছে। লিফলেটে বিএনপির আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এর আগেও আন্দোলনের বিষয়বস্তু বিভিন্ন সময় জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। তাতে মানুষের সাড়াও মিলেছে।’
তিনি বলেন, ‘কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন আছে এবং উদ্বুদ্ধকরণ তো আগে থেকেই হয়ে আসছে। আমরা বড় বড় সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, পদযাত্রা এগুলোর মধ্যেও তো থেকেছি। এটাও তাই হবে। আমরা গণসংযোগ করব, কথা বলব। এ ছাড়া গণমাধ্যমভিত্তিক যেসব প্রযুক্তি আছে, সেগুলো ব্যবহার করেও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হবে। আমরা মনে করি যে, জনগণের পক্ষের যে কোনো আন্দোলন সফল হবেই। লড়াই হয়তো স্বল্প বা দীর্ঘস্থায়ী হবে; তবে পরাস্ত তাদের (আওয়ামী লীগকে) হতেই হবে।’
রিজভী বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে গিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, সেই সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচির ধরন আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে।’
এদিকে অসহযোগের সমর্থনে আগামীকাল শনিবার লিফলেট বিতরণ ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, ‘অসহযোগ আন্দোলন সফলের লক্ষ্যে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় এরই মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ শুরু হয়েছে। জনগণ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছে। কেননা অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারকে অসহযোগিতা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দিনাজপুর জেলায় লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণের টার্গেট রয়েছে।’
তবে লিফলেট ছাপাতে প্রেসের মালিক বা কর্মচারীদের পুলিশ গিয়ে নিষেধ করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন