১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক ব্যানারে দুটি দলই বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে চলমান আন্দোলন জোরদার করতে এবার এক মঞ্চে আসছে বিএনপি-জামায়াত। দল দুটির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সরকারবিরোধী দলগুলো নিয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী সর্বদলীয় ঐক্য’-র ঘোষণা আসছে।
আগামী ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর এই মঞ্চ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে বলে নিশ্চিত করেছে বিএনপি-জামায়াত সূত্র। মঞ্চটিতে অন্যান্য সরকারবিরোধী দলও থাকবে।
সূত্রমতে, ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে নতুন এই মঞ্চের ব্যানারে সব কর্মসূচি একসঙ্গে পালন হবে। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সব দলের নেতারা এক মঞ্চে একসঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
তবে চলমান আন্দোলনে যুক্ত যেসব দল নতুন মঞ্চের ব্যানারে আসবে না, তারা এখনকার মতো সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলেন চালিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দ্য বিজনেস স্টার্ডাকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ সবাই আমরা এই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে একই ছাতার নিচে আসার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ সরকারের পতন ঘটিয়ে আমরা বিজয় উদযাপন করব।’
বিএনপি-জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক ব্যানারে দুটি দলই বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপি ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীদের নয়াপল্টনে বিজয় র্যালিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতের ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরও একই দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা দেশে-বিদেশে নির্লজ্জ মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছেন।
রিজভী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের যুক্তরাষ্ট্র ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়ার বক্তব্য ডাহা মিথ্যা এবং এটি সরাসরি প্রত্যাখান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র এটিকে ‘ডিপ ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড
যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পৃথক তিন থানার মামলায় এ রায় দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসেন।
২০১৩ সালে তেজগাঁও থানায় করা নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ১৪ বিএনপি নেতাকর্মীকে আড়াই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া ২০১৮ সালের রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীকে আড়াই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
২০১৮ সালে রাজধানীর বনানী থানায় করা নাশকতার আরেকটি মামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে একবছর নয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিএনপি দাবি করেছে, সারা দেশে মোট ৭২টি মামলায় দলের প্রায় ১ হাজার ১৪১ জনের বেশি নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘোষিত রায়ের অধিকাংশই ২০১৩ ও ২০১৮ সালের রাজনৈতিক মামলা।
১০০ মামলার আসামি, ১১ মামলায় জামিন পাননি মির্জা ফখরুল
মোট ১০০ মামলার আসামি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১১টি মামলায় জামিন না পাওয়ায় কারাগারে আটক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী।
জামিন না পাওয়া ১১ মামলার মধ্যে ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের হামলার মামলায় হাইকোর্টে রুল শুনানি চলছে। বাকি দশটিতে গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার বিচারিক আদালতে জামিন চাইলেও, এই মামলাগুলোয় তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার না দেখানোয় বিচারিক আদালত জামিন আবেদন শোনেননি। উচ্চ আদালতে আগাম জামিনে আবদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারিক আদালত।
আইনজীবীরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ চলাকালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলাসহ মোট ১১ মামলায় জামিন দরকার বিএনপি মহাসচিবের।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের মামলায় মির্জা ফখরুলকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি করার সময় বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলা-সংক্রান্ত এই তথ্য তুলে ধরেন ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
হাইকোর্ট এই রুলের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। যদিও এই রুল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মৌখিকভাবে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবীরা।
হাইকোর্ট এই রুলের ওপর শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। যদিও এই রুল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মৌখিকভাবে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবীরা।
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলাটি ছাড়া বাকি ১০ মামলার মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম হত্যা মামলা অন্যতম। দশটি মামলার মধ্যে পল্টন থানায় সাতটি ও রমনা মডেল থানার তিনটি মামলা রয়েছে বলে টিবিএসকে জানান মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা।