রাজনীতি

জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের আশা-প্রত্যাশা নেই

জাতীয় পার্টি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ রয়ে গেছে

প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পন্থা অনুসরণ করে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এখনও তার ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ চরিত্র ধরে রেখেছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের ভাই ও দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে। এদিকে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ বলেছেন, জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা’র সঙ্গে যেন আওয়ামী লীগ কোনো জোটে না যায়।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন রওশন। তার নেতৃত্বাধীন জাপা নেতাদের কাছে রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা ছাড়া আর কোনো বৈধ মনোনয়ন ফরম নেই। অন্যদিকে, জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও এরশাদের পুত্র সাদ এরশাদকে বাদ দিয়ে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তারা দুজনেই সংসদ সদস্য।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রওশনের নেতৃত্বে জাপা নেতারা জানান, রওশন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা উপদলের সঙ্গে কোনো আসন ভাগাভাগি বা জোটে না যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। তার দাবি, জোরপূর্বক দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন জিএম কাদের।

বৈঠক প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদ এখনও বিরোধী দলীয় নেতা, যে কোনো সময় তিনি সংসদ নেতার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। জাপা ৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা তারিখের নির্বাচনেই অংশ নিতে চায়।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে পারি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছে।’ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি এখানে অংশ না নিতে আসেনি।

আওয়ামী লীগ চায় জাপা নির্বাচনে আসুক

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, চূড়ান্ত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে বলে তারা আশাবাদী, তবে জাতীয় পার্টির সূচনার পর থেকে এটি একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল হওয়ায় সন্দেহ থেকে গেছে।’

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমন সংশয় প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।

তবে, জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাপা নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে থাকা আ.লীগ নেতারা বলেছেন, তারা আত্মবিশ্বাসী যে জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে ও ১৭ ডিসেম্বর তা পরিষ্কার হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে অন্তত ৫০টি আসন চেয়েছিল, তবে আওয়ামী লীগ তাদের প্রায় ৩০টি আসন দিতে যাচ্ছে। আসন ভাগাভাগি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, কারণ আওয়ামী লীগ একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চায় আর জাপা নেতারা চায় জয়ের আশ্বাস।

এ বিষয়ে জাপা মহাসচিব চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন ও সরকার ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরির পরিবেশ নিশ্চিত করলে নির্বাচন ছাড়ার কোনো কারণ নেই।

আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের জিএম কাদের সমর্থকদের মোকাবিলা করতে হবে কারণ রওশনের সমর্থকরা এখন নির্বাচনী দৌড়ের বাইরে; পরে তাদের সমস্যার সমাধান হতে পারে।’

২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যা ঘটেছিল

২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এর মধ্যে ২৯টি আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। বাকি ২০টি আসনের যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে তার কোনোটিতেই জিততে পারেনি জাতীয় পার্টি।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৩টি আসনে জয়লাভ করে এবং আওয়ামী লীগ এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। সে সময় সারাদেশে ৪৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও এর মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ী হয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দিয়েছিল, কিন্তু দলটি তার মধ্যে ২১টি আসনে জিতেছিল। দুই দলের মধ্যে ১৪৫টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জিততে পারেননি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে প্রার্থী মনোনীত করলেও পরে ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য সদস্যদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ২৮৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে এবার সরাসরি জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড়তে চায় না আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশনের সাক্ষাৎ, জিএম কাদেরকে কটূক্তি

রওশন এরশাদকে বহনকারী গাড়িটি গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার ছেলে সাদ এরশাদ ও তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি এবং কাজী মামুনুর রশীদকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবেশ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা উপদলের সঙ্গে জোট না করার অনুরোধ জানান, বৈঠকের পর জাপা মহাসচিব সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

রাঙ্গা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন করি না। তিনি জোরপূর্বক জাতীয় পার্টির দখল নিয়েছেন, এ কারণেই রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী, ছেলে ও দুইবারের মহাসচিব নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তাহলে তারা কার সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছেন? আমরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে নেই। আমরা তাদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব না। অন্যায়ভাবে দলের প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন জোট না হয়।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রাঙ্গা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি বিষয়টি দেখবেন।’

গণভবন থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রওশন এরশাদ।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। তিনি আমার ছেলের জায়গায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তারা জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্বকে সমর্থন করেন কি না জানতে চাইলে রওশন বলেন, ‘তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বাদ দিয়েছে। কেন কোনো সমর্থন থাকবে?’

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দল।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রওশন বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা সংবিধানকে সম্মান করি। তাই নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিলকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে নির্বাচনের তফসিল বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে।

এত কিছুর পরও রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

এদিকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি, জাপা ৩২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো রওশনকে ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার পথে।

৩ মন্তব্য

  1. এটি কোন রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি সুবিধা বাদী হালুয়া রুটির অংশীদার হয়ে স্বৈরাচারের সহঝোগি অংগ সংগঠন। গনতন্ত্রর বিরুদ্ধের শক্র ভোটাধিকার হরণ কারি মাফিয়া লুটপাট কারি দের দোষর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button