বিএনপির সিনিয়র নেতারা যখন কারাগারে আটক ঠিক সেই সময়ে রিজভী বাইরে। প্রতিদিন তিনি অনলাইনে এসে ব্রিফিং করছেন, সরকারকে শাসাচ্ছেন, গালাগালি করছেন, আবার হুমকিও দিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি অবরোধ উপলক্ষে হঠাৎ করে ঝটিকা মিছিল করছেন। রিজভী একাধিক মামলার আসামি, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। দলের সিনিয়র নেতাদের যখন পলাতক অবস্থা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মামলাগুলো দ্রুত বিচার হচ্ছে, তখন রুহুল কবির রিজভীর মামলা নিষ্ক্রিয়। তিনি অবরোধে মিছিল করলেও সেই মিছিলে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি তাকে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার অবস্থান জানে না এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু তারপরও রিজভীর ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি উদারতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই উদারতাটি বিএনপি নেতাদের জন্য এক ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির নেতারা এখন রুহুল কবির রিজভীকে সন্দেহের চোখে দেখছে।
অনেকেই মনে করেন যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হওয়ার জন্য রুহুল কবির রিজভী একজন বড় দাবিদার। আর সে কারণেই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে রিজভীর গ্রেপ্তার না হওয়াটার সঙ্গে সরকারের যে যোগসাজোসে হচ্ছে বা সরকারের সঙ্গে যে রিজভীর একটা গোপন আঁতাত রয়েছে, এরকম গুঞ্জনকে কেউ উড়িয়ে দিতে পারছেন না।
বিএনপির বিভিন্ন মহলের কাছে রিজভী একজন হিরো, একজন সাহসী মানুষ। কারণ তিনি এই কঠিন সময়ের মধ্যে দলের হাল ধরে আছেন। দলকে তিনি মূলত এই মুহূর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন, দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় যেন মিছিল সমাবেশ হয় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা প্রদান করছেন। কিন্তু যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস কিংবা আমির খসরুর মাহমুদের মতো নেতাদেরকে পুলিশ আত্মগোপন থেকে গ্রেপ্তার করেছে, তখন রিজভীকে কেন গ্রেপ্তার করছে না? তাহলে কি রিজভীর সঙ্গে সরকারের একটা গোপন সম্পর্ক রয়েছে? রিজভী কি সরকারের কাছে বিএনপির গোপন পরিকল্পনা বা অন্য তথ্যগুলো ফাঁস করে দিচ্ছেন? এই কারণেই রিজভীকে কৌশলগত কারণে বাইরে রাখা হয়েছে?
চারদিন আগে রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে বিএনপিতে যারা কট্টর, যারা সরকারের বেশি সমালোচক, তাদের সাথে সরকারের গোপন সখ্যতা তৈরি হয় এবং তাদেরকে সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ দিয়ে এই সমস্ত নেতাদের কাছ থেকে গোপন তথ্য নেওয়া হয়।
বিএনপির পরিকল্পনা কি, বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কি ভাবছে, সামনের দিনগুলোতে বিএনপি কি ধরনের কর্মসূচি দেবে ইত্যাদি মহামূল্যবান তথ্যগুলো কি রিজভী সরকারকে সরবরাহ করছেন? সাম্প্রতিক সময়ে এই সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে কিছু ঘটনায়। যেমন, রুহুল কবির রিজভী বিএনপির কয়েকজন নেতাকে অবশ্যই রাজপথে নেমে অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে মিছিল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই নির্দেশনা অনুযায়ী যারা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে গেছেন, তাদের কয়েক জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রমতে, বিএনপির বিভিন্ন মহল মনে করছে রিজভী ছাড়া তাদের অবস্থানের কথা কেউ জানত না এবং তারা যে মিছিলে যাবেন এই তথ্যটি শুধুমাত্র রিজভী জানতেন। তাহলে রিজভী কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন! নাকি রিজভীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত গুঞ্জনগুলো শোনা যাচ্ছে- তার সবই আসলে অপপ্রচার, নাকি বিরোধী দলের আন্দোলনকে ম্লান করে দেওয়ার জন্য সরকারই এধরনের অপপ্রচার করছে, এবং রিজভীকে সরকারের এজেন্ট হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে?