ময়মনসিংহ-১ আসনে ভোটে লড়বেন গৃহকর্মী, ব্যাপক চাঞ্চল্য

ঘরে বৃদ্ধ মা আর দুই সন্তান নিয়ে সরকারি জমিতে বসবাস করেন মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম। সংসারে চাকা সচল রাখার দায়ভার তাঁর কাঁধে। কখনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কখনোবা গৃহকর্মীর কাজ করে চলান সংসার। পরিচ্ছন্নতার কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সেখানে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণমুক্তি জোট নামক দলের হয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করে আলোচনায় এসেছে এই নারী।

গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া) আসন থেকে গণ মুক্তিজোট নামক নিবন্ধিত দলের হয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। গত শনিবার তাঁর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমানের নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়। এতে মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগমের মনোনয়ন বৈধ বেলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এমপি প্রার্থী হওয়া এই নারী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর মেয়ে। স্বামী ফারুকের বাড়ি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বোররচর এলাকায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এই নারীসহ মোট আটজন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী কাজল চন্দ্র মহন্ত তিনি হালুয়াঘাট উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মার্শাল মালেশ চিরান। তিনি যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং তৃণমূল বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের সহসভাপতি।

প্রার্থী হয়েছেন হালুয়াঘাট উপজেলা যুক্তফ্রন্টের নেতা মো. মোখলেছুর রহমান বাচ্ছু। ইসলামিক ঐক্যজোট থেকে মাহবুর রহমান কিছুটা পরিচিত থাকলেও আওয়ামী লীগপন্থী তিন প্রার্থী ছাড়া ওই নারীসহ অন্য চারজন প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের কাছে অচেনা। তাঁদের নেই দলীয় কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। এতে সাধারণ মানুষ প্রার্থী বাছাই নিয়ে শঙ্কিত।

গণমুক্তি জোটের প্রার্থী রোকেয়ার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় ফারুক মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় ১২ বছর আগে। তাঁর ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এক মেয়ে পড়ে শিশু শ্রেণিতে। গত দুই বছর ধরে স্বামী ফারুক দুই সন্তানসহ তাঁকে ছেড়ে চলে যান। কোনো প্রকার যোগাযোগ না করায় দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন এই নারী। হালুয়াঘাটে বোয়ালমারা এলাকায় সরকারি খাসজমিতে মা আছিয়া খাতুনকে নিয়ে কোনো রকম দিন পার করে আসছে। পেটের দায়ে হালুয়াঘাট পৌর শহরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বল্প বেতনে কাজ করতেন। এতে যা পেতেন তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার।

তাঁর প্রার্থিতা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কর্মী জানান, যাঁর কোনো জনপ্রিয়তা নেই, যাঁকে কেউ চিনে না—সে কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের এমপি প্রার্থী হয়? এই ধরনের প্রার্থী হয়ে জনগণকে বিব্রত করছে।

রোকেয়া বেগমের মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘মেয়ে হালুয়ঘাটের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। সেখানে ৪ হাজার টাকা দেয়। এই দিয়ে কোনো মতে সংসার চলায়। স্বামী দুই বাচ্চা রেখে চলে গেছে। একমাত্র আমার মেয়ের আয় দিয়ে কোনো মতে দুই নাতিকে নিয়ে সংসার চলছে। কয়েক দিন আগে রাতে কল আসে আমার মেয়ের কাছে—তোমার এলাকার নাম দাও ও তোমার পুরো নাম বল, তার পর থেকে শুনতেছি আমার মেয়েকে নাকি এমপি দারে করাইছে।’

তবে প্রার্থী হওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ননাসের জামাই কয়েক দিন আগে এমপি হওয়া বিষয়ে আমাকে বলেন। প্রথমে আমি রাজি হয়নি। পরে তিনি বলেছেন আমার কিছু করা লাগবে না সবকিছু দল থেকে করা হবে।’

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘হালুয়াঘাট থেকে প্রার্থী হওয়া রোকেয়া আমার শ্যালকের স্ত্রী। সে অত্যন্ত গরিব মানুষ। নতুন দল হিসেবে তৃণমূলে পরিচিতি বাড়াতে প্রতিটি আসনে প্রার্থী করানো হয়েছে। সে হিসেবে হালুয়াঘাট থেকে তাকে প্রার্থী করানো হয়। তাকে আমি সহযোগিতা করছি।’

প্রার্থিতা বিষয়ে গণমুক্তি জোটের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি মামুনুর রশিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Exit mobile version