দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অনেক আগেই দিয়ে রেখেছিল বিএনপি। বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসার গুঞ্জন ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট থেকেছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে দল ভেঙে যাবে- এমন আশঙ্কাও ছিল। দুই-চারজন লোভ ও চাপে পড়ে দল ছাড়লেও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। যে রকম আশঙ্কা করা হয়েছিল তার থেকেও অনেক কম নেতা দল ছেড়েছে। এতে দলে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে বিএনপি।
এদিকে, ভাঙন ঠেকাতে পারলেও বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে দল ছেড়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতা ও ৩০ সাবেক সংসদ সদস্য এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে বিএনপির দাবি, এ সংখ্যা ১৫ এর আশপাশে হবে। এর মধ্যে আটজন কেন্দ্রীয় নেতা ও ছয়জন জেলা পর্যায়ের নেতা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে শুধু বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা দল ছাড়েননি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বিএনপির সাড়ে ৭শ নেতাকর্মী নির্বাচনে আসতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম গঠনের পর ধারণা করা হয়, বিএনপির অনেক নেতা দল ছাড়বে। তখন থেকেই দলের ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হয় বিএনপির হাইকমান্ড। নানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন নেতৃবৃন্দ। ২৮ অক্টোবর সমাবেশের পর প্রার্থী হতে পারেন, এমন নেতাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলতে বলা হয়। নির্দেশ পেয়ে অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। ধারণা ছিল কারাগারে নেতাদের চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে আনবে সরকার। বিএনপি মনে করছে, আগে থেকে সতর্ক থাকার কারণে এবারও সরকারের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির মধ্যে যারা প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্য, তাদের বেশিরভাগ বহু বছর ধরে নির্যাতিত এবং অনেকেই কারাগারে। দলের হাইকমান্ড জানে, এরা আপোষ করবে না। এর বাইরে এ বার্তা সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়েছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনও ভাবেই যাওয়া যাবে না। এবিষয়টি দলের মধ্যে কাজ করেছে।
বিএনপির একজন ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচন-মুখি দল। সারাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী। তারা নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচনের জন্য ৫ বছর অপেক্ষা করে কিন্তু বিগত নির্বাচন তারা মাঠে থেকে দেখেছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতন দেখেছে, সহ্য করেছে। ভোট কারচুপি দেখেছে। তারা সরাসরি ভুক্তভোগী। আমাদের থেকে তারা বেশি নির্যাতিত। আমরা যেমন জানি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না তেমনি তারাও জানে। ফলে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত তারা সঠিক মনে করেছে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। যে পরিমাণ নেতার দল ছাড়ার আশঙ্কা ছিল, ছেড়েছে তার অনেক কম।
আগামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট-গ্রহণ। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত হয় যাচাই-বাছাই। আপিল নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হবে।
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্রে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের ইচ্ছা ছিল, চেষ্টা ছিল। বিএনপি নেতাদের ভয় দেখিয়েছে, নানাভাবে চাপ দিয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এতে প্রমাণ হয় বিএনপিকে গত ১৭ বছরেও ভাঙা সম্ভব হয়নি, আগামীতেও হবে না। দলের নেতৃত্বের কারণে সরকারের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপির এই নেত্রী। পাশাপাশি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভূমিকাও প্রশংসনীয় মনে করেন তিনি।
বিএনপি সূত্র বলছে, গত ২৮ অক্টোবর মহাসাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির মোট ২২ হাজার ১৯৬ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলা ৯১২ বেশি। এসব মামলায় ৮১ হাজার ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে ৮ হাজার ৬২৪ জনের অধিক নেতাকর্মী। একজন সাংবাদিকসহ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩২টি মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ৫৭৯ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনমুখী দল বিএনপি বার বার নির্বাচন বর্জন করছে। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে দলটি। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে দলটির বিরুদ্ধে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির আন্দোলন এখন অনেকটাই ঠিলেঢালা চলছে। নির্বাচন বর্জনে আন্দোলনের সফলতা আসবে কিনা সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে।