আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে যে নির্বাচনী কৌশল নিচ্ছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের ৪ শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারা সবাই নিজেদের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করছেন। নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে চায় তারা। তবে নির্বাচনের মাঠে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে কি না- সে বিষয়ে পরিষ্কার করছে না আওয়ামী লীগ। তার জন্য দলটির স্বতন্ত্র প্রাথীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একইভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটসঙ্গী ও মিত্রদের কতগুলো আসন ছেড়ে দেয়া হবে- তার জন্যও অপেক্ষা করতে হবে তাদের। সব মিলে নির্বাচনের আগে জোটসঙ্গী ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অনেকটাই কৌশলে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত শরীক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দর কষাকষি চালিয়ে যাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একইভাবে দলের হাইকমাণ্ড স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক কৌশল নিয়েছে বলে জানা যায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি এবার দলটিরই অন্তত ৪৪২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৪ জন বেশি। সাধারণত দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হলে সেটাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কেউ কেউ এসব প্রার্থীকে ‘বিদ্রোহী’ বলে পরিচয় দেন। দলীয় বিদ্রোহীদের আনা হয় শান্তির আওতায়। বহিষ্কার করা হয় দল থেকে। তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিএনপি না থাকায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েই দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের নেতারাই বলছে- শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবে কি না তার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মূলত যে সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা যদি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা জমিয়ে তুলতে পারে- তাহলে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সিদ্ধান্ত থেকে বেড়িয়ে আসবে আওয়ামী লীগ।

এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়া এটা একটা রাজনৈতিক কৌশল। যেভাবে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় দল তেমনি অসংখ্য নেতা আছেন যোগ্য। তাদের মধ্যে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে দলের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। জোট শরীকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই আসন বণ্টন করা হবে। ঢালাওভাবে সবাই স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে বিষয়টা এমন নয়। ১৬ তারিখ পর্যন্ত দলীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।

সূত্রে মতে- দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকায় মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ বনাব আওয়ামী লীগ। কোথাও কোথাও সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এমন পরিবেশ থাকলে শেষ পর্যন্ত দলের তৃণমূল ব্যাপক ঝামেলার মধ্যেই পড়বে। ‘স্বতন্ত্র কৌশল’ নামে দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বিএনপিবিহীন ভোটে তাদের এই কৌশলকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন। কারণ, এতে প্রাণঘাতী সংঘাতের আশঙ্কাও থাকছে। অতীতে সব ধরনের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এবার গণহারে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এটা স্পষ্ট করেনি দলটি। সাধারণত আওয়ামী লীগের কোনো নেতা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কারণ দর্শানো এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বহিষ্কার করার বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাড়ালে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়াকে গুরুতর অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে আওয়ামী লীগ। সব মিলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে নিজেরে কৌশল কতটুকু বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগ করতে পারবে বা দলের যারা স্বতন্ত্র হয়েছে- তারা দলের কথা কতটুকু রাখবে, সে বিষয় নিয়েও আওয়ামী লীগকে এই মুহূর্তে ভাবতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, দলীয় প্রধানের সায় থাকায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও নেয়া হতে পারে। বরং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সবাইকে গণহারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকতে দেয়া হবে, নাকি কিছু কিছু প্রার্থী রেখে অন্যদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হবে এটা নিয়ে দ্বিমত আছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এটি পরিচালনা করেন। নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুকন্যার দিকে সব বিষয়ে তাকিয়ে থাকে। তিনি যা নির্দেশ দেন সবাই তাই পালন করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। সুনির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যেকোনো জায়গায় ইচ্ছেমতো কেউ প্রার্থী হতে পারবে না। সময় আসলে এটি আরও পরিষ্কার হবে।

তথ্যমতে- দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মতো ঝুলে আছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোট ও মিত্রদের আসন বন্টনের বিষয়টি। মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হলেও জোট প্রধান দলের পক্ষ থেকে শরীকদের কোনো নির্দেশনা বা বার্তা দেয়া হয়নি। এ নিয়ে জোটের শরীক দলের নেতারা অনেকেই নাখোঁশ। জোট আসন গুলোতে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দেয়া হয়েছে নৌকার মনোনয়ন। নিজেদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও সমঝোতা না হলেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শরীক দলের প্রার্থীরা। নিজ নিজ আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারা। এর আগের নির্বাচন গুলোতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা নৌকা প্রতীকের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার একেবারেই ব্যতিক্রম পরিবেশ তৈরি হয়েছে জোট শরীক দলগুলোর জন্য। ফলে নির্বাচনের আগে জোটবদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্ররা। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন- জোটবদ্ধ ভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জোট নেতাদের সেই বার্তাও দেয়া হয়েছে। সুযোগ হলেই জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জোট শরীক ও মিত্রদের আসন চূড়ান্ত করা হবে। তবে সেটিও যদি হয়- তাহলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত জোটের নেতাদের অপেক্ষা করা লাগতে পারে বলে জানা গেছে।

Exit mobile version