এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশনও বারবার বলছিল যে, তারা স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোনো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন এটিও বলেছিল যে, তারা ২০১৮ এর মতো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা আস্থা রাখতে চাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ তারা করতে পারেন কিনা তা দেখতে হবে।
আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হিসেবেই তারা রায় দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের যে কর্মকাণ্ডগুলো তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত কতটুকু নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। কারণ নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা দরকার, সেই ভূমিকা তারা এখন পর্যন্ত রাখতে পারছেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। যেমন নির্বাচন যে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে সেই মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় ৯০ ভাগ প্রার্থী আচরণবিধি মানেননি। অথচ নির্বাচন কমিশন মাত্র কয়েক হাতে গোনা কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এই সমস্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই এবং এবার এমন একটি নির্বাচন ঘটছে যে নির্বাচনে আর যাই হোক আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই নির্বাচন কমিশনের সামনে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার। কিন্তু সেই সুযোগ কমিশন কাজে লাগাতে পারছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এখন কোন প্রার্থীর প্রচার না করার কথা নয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীরা নানা রকম প্রচারণা করছে, শোডাউন করছে। অনেক স্থানেই দেখা যাচ্ছে রঙিন পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এই সমস্ত ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনে আচরণবিধির লঙ্ঘন। অথচ এই জায়গায় নির্বাচন কমিশন কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কুণ্ঠিত, কেন কমিশন বলিষ্ঠ হতে পারছে না, সেই প্রশ্নটি বিভিন্ন মহলে উঠেছে।
বিএনপি সহ কয়েকটি বিরোধী দল শুরু থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তারা বলছিল যে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ এবং ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সব সময় বলছিল যে তারা কারও আজ্ঞাবহ নয়। বরং স্বাধীনভাবে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়া পর্যন্ত সময়ে নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আর এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলো এখন আগামী নির্বাচনে কমিশন কতটুকু বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। আর নির্বাচন কমিশন যদি একবার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, নির্বাচন কমিশন নিয়ে যদি একবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। কারণ নির্বাচন কমিশনের একটি শক্ত দৃশ্যমান এবং শক্তিশালী অবস্থান আন্তর্জাতিক মহল দেখতে চায়। সেরকম একটি অবস্থান যদি কমিশন তৈরি করতে না পারে তাহলে কমিশনই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।